উচ্ছ্বল নদী, পাহাড় ও জঙ্গল, এই তিনের স্বাদ যদি একযাত্রায় পেতে চান তবে আপনাকে যেতেই হবে ডুয়ার্সে।
‘ডুয়ার্স’ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে হিমালয়ের তরাই অঞ্চলে অবস্থিত। সমতলভূমি ছেড়ে পাহাড়ের কোলে হারিয়ে যাওয়ার শুরু এই ডুয়ার্সে। ভৌগলিকগত দিক থেকে ডুয়ার্সকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এক পশ্চিম ডুয়ার্স দুই আসাম ডুয়ার্স। সঙ্কোশ নদীর পশ্চিম পার পর্যন্ত এই পশ্চিম ডুয়ার্স। এই এলাকাই মূলত পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে পড়ে। সমগ্র ডুয়ার্সের দৈর্ঘ্য ৩৫০ কিমি ও প্রস্ত ৪০ কিমি। গরমকাল হোক ঠান্ডা ডুয়ার্সে ঘুরে আসা যায় যেকোনও সময়েই। তবে বর্ষা কালে না যাওয়ায় ভালো এই সময়ে নদীর স্রোত যেমন তেমনি জঙ্গলেও রাস্তাই যাতায়াতের অসুবিধা থাকে কিছুটা। তবে বর্ষার ডুয়ার্স আরও মোহময়ী, বৃষ্টিস্নাত জঙ্গল ও উৎশৃঙ্খল পাহাড়ি নদীর রূপ মুগ্ধ করে বৈকি। যদিও ১৫ জুন থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশিরভাগ অভয়রণ্যই বন্ধ থাকে। বিশেষ কয়েকটি এলাকায় অবশ্যই যাওয়া যায়। তো চলুন ঘুরে আসি ডুয়ার্স –
কিভাবে যাবেন –
যদি আপনি ট্রেনে যাত্রা শুরু করেন তবে…..
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে –
১৩১৭৩ শিয়ালদহ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস
১৩১৪১ শিয়ালদহ তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস
১২৩৪৩ দার্জিলিং মেল
১২৩৭৭ পদাতিক এক্সপ্রেস
হাওড়া স্টেশন থেকে —
১২৩৪৫ সরাইঘাট এক্সপ্রেস
২২৫১১ কর্মভূমি এক্সপ্রেস
২২৩০৯ হাওড়া নিউজলপাইগুঁড়ি এসি এক্সপ্রেস
কলকাতা স্টেশন থেকে —
১২৫১৫ গরিবরথ এক্সপ্রেস
১৩১৮১ কাজিৰঙা এক্সপ্রেস
১২৫২৫ কলকাতা ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস
১২৩৬৩ হলদিবাড়ি সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস
আপনি চাইলে নিউ মাল জং স্টেশনেও নেমে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ও হাওড়া থেকে কর্মভূমি এক্সপ্রেসে নিউ মাল জং স্টেশনে নামতে হবে| নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে প্ল্যাটফর্মেই রেস্টরুম পেয়ে যাবেন। সেখানে একটু ফ্রেশ হয়ে প্লাটফর্ম থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখবেন প্রচুর ভাড়ার গাড়ি রয়েছে। ডুয়ার্স যাওয়ার জন্য একটি বুক করে নিলেই হল। লাটাগুড়ি পর্যন্ত ভাড়া পরবে ১০০০ – ১৫০০ টাকা মত, তবে সিজনে এর বেশিও হতে পারে। সময় লাগবে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা।
যদি বিমানে আসেন তবে আপনাকে নামতে হবে বাগডোগরা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখবেন অনেক গাড়ি আছে ডুয়ার্স যাওয়ার জন্য ভাড়া পরবে ১৫০০ – ২০০০ টাকার মত। আর সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। গাড়ি করে সোজা লাটাগুড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিয়ে পৌঁছে যান গরুমারা নেচার কটেজে। দুপুরে রেস্ট নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে চলে যান মেদেলা ওয়াচ টাওয়ার এর উদ্দেশ্যে| গরুমারা ফরেস্ট এন্ট্রি পয়েন্টে গিয়ে টিকিট কেটে উঠে পড়ুন এখানকার অন্যতম আকর্ষণ মোষে টানা গাড়িতে। ভারত বর্ষের একমাত্র এই ফরেস্টেই এই দূর্লভ সুযোগ রয়েছে। এই মোষের গাড়ি করে চা বাগানের মধ্য দিয়ে পৌঁছে যান মেদেলা ওয়াচ টাওয়ারে।
মূর্তি নদীর ধারেই এই ওয়াচ টাওয়ার, কংক্রিটের ঘোরানো সিড়ি বেয়ে ওয়াচ টাওয়ারের একেবারে তিনতলায় উঠে পড়তে পারবেন। নদীর পাশেই রযেছে ঘন জঙ্গল। পরন্ত বিকেলে নদীতে জল খেতে আসে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। বিশেষ করে গন্ডার। ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে দেখা পেয়ে যেতে পারে বাইসন, হাতি, হরিণ, ময়ূর, ইত্যাদি বন্যপ্রাণীরও। ফিরে এসে কটেজে রাতে উপভোগ করুন স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের নাচগান। যা এখানকার ঐতিহ্য বহন করে। বহু মানুষ এই গোরুমারা জঙ্গলের উপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্ভর করছে। এই জঙ্গলে আরও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। যেমন- যাত্রাপ্রসাদ, চুকচুকি ও রাইনো পয়েন্ট। এর মধ্যে যাত্রাপ্রসাদ আর রাইনো পয়েন্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এই ওয়াচ টাওয়ারগুলি থেকেই বেশিরভাগ সময় পশুপাখি দেখতে পাওয়া যায়। মনে রাখবেন প্রতি বৃহস্পতিবার গরুমারা উদ্দ্যাণ বন্ধ থাকে পর্যটকের জন্য। বিস্তারিত এই ছবিতে দেখে নিন।
আগেই বলেছি ডুয়ার্স মানে শুধুই জঙ্গল নয়। ডুয়ার্স মানে বৈচিত্রময় প্রকৃতি। এখানে ঘুরতে এলে প্রকৃতির অপরূপ স্বাদ পাবেন। পাহাড়ি কন্যার মতো মূর্তি নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসেও সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। প্রয়োজনে স্নানও সেরে নিতে পারেন নদীতে। এবার সেখান থেকে চলুন ঝালং ভিউ পয়েন্টে। নিচে বয়ে চলেছে জলঢাকা নদী। তার পরেই ঝালং গ্রাম। দেখা হলে উঠে পড়ুন গাড়িতে ও চলুন ভারত ও ভুটান এর সীমান্তের গ্রাম বিন্দুর উদ্দেশ্যে। সেখানে দেখে নিন জলঢাকা নদীর উপর বিন্দু ব্যারেজ। নদীর পাশ দিয়েই ওপারে উঁকি দিচ্ছে ভুটানের নাম না জানা গ্রামগুলি। এর সঙ্গে দেখে নিন রকি আইল্যান্ড। এবার ফিরে আসুন হোটেল, রিসর্ট বা গেস্ট হাউজে।
( এরপর পরবর্তী পর্ব… )
Post a Comment
Thank You for your important feedback