নিউটাউনে আইনজীবী রজতকুমার দে-র খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলেন তাঁর স্ত্রী। সোমবার বারাসতের জেলা জজ কোর্টের বিচারক রজতবাবুর স্ত্রী অনিন্দিতা পাল দে-কে দোষী বলে ঘোষণা করেন। আগামী বুধবার তাঁর সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক। খুনের ঘটনার পর ৮ মাসের মাথায় বিচার পর্ব শেষ হল। এই মামলার উল্লখযোগ্য দিক হল সোশাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে করা বিভিন্ন মেসেজকেই প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে আইনজীবীর স্ত্রীকে দোষী ঘোষণা করলেন বিচারক।
২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর মাঝরাতে খুন হয়েছিলেন আইনজীবী রজতকুমার দে। নিউটাউনে নিজের ফ্ল্যাটেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। স্ত্রী অনিন্দিতার দাবি ছিল আত্মহত্যা করেছেন রজত। কিন্তু পুলিশি জেরায় তাঁর বয়ানে নানা অসঙ্গতি পায় পুলিশ। এরপর ময়নাতদন্তে উঠে আসে মোবাইল ফোনের চার্জার গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে আইনজীবীকে। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে খুনের সময় বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিল না। এরপরই পারিপার্শ্বিক তথ্য ও প্রমাণের জেরে পুলিশ গ্রেফতার করে অনিন্দিতাকে।
গোটা বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বৈদ্যুতিন তথ্যপ্রমাণের ওপর জোর দিয়েছিলেন। এই মামলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘অভিযুক্ত অনিন্দিতার মোবাইল ফোনের ফরেন্সিক পরীক্ষার পর উঠে আসে বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য’। অনিন্দিতার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং হিস্ট্রি উদ্ধার করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন রজতের সঙ্গে অনিন্দিতার সম্পর্ক ভালো ছিল না। সে রজতের রোজগারে সন্তুষ্ট ছিল না। এই কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছিলেন অনিন্দিতা। কিন্তু শিশুপুত্রের কথা মাথায় রেখে রজত সেটা চাইছিলেন না। মেসেজে পাওয়া বিভিন্ন মেসেজ ঘেঁটে পুলিশ আরও জানতে পারে অনিন্দিতা রজতের ওপর শারীরিক নিগ্রহও চালাতেন। এমনকী খুনের রাতেও মারধোর করা হয় রজতকে।
অনিন্দিতার মোবাইল ফোনের ফরেন্সিক পরীক্ষার পর জানা যায়, সে গুগুল সার্চে বারবার ‘লিগেচার মেটিরিয়াল’- কথাটি সার্চ করেছিলেন। এই ধরনের সার্চে জানা যায় কী কী দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া যায়। অথচ প্রমাণ পাওয়া যাবে না। পুলিশের দাবি, এই সার্চের পরই অনিন্দিতা রজতের গলায় মোবাইল চার্জারের তার ফাঁস লাগিয়ে খুন করে। পাশাপাশি অনিন্দিতার করা একটি ফেসবুক পোস্টও তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছে, রজত খুনের রাতেই অনিন্দিতা ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, ‘ম্যারেজ ইজ এ পাবলিক টয়লেট’। সেই সঙ্গে তিনি একটি খবরের লিঙ্ক শেয়ার করেন, যেখানে রয়েছে একজন মহিলা কীভাবে তাঁর স্বামীকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে কাটে। এবং সেই মাংস দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে খাইয়েছিলেন রাজমিস্ত্রিকে। এই সমস্ত বৈদ্যুতিন ও পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই দোষী প্রমাণিত করা হয় অনিন্দিতাকে। এখন দেখার স্বামীকে খুনের দায়ে কী সাজা হয় অনিন্দিতার।
Post a Comment
Thank You for your important feedback