কাজিরাঙার অপূর্বশোভা ও একশৃঙ্গ গন্ডার

করোনা আবহে এখন কোথাও বেড়ানো ঘোরা প্রায় সবই বন্ধ। একে তো ট্রেন প্রায় বন্ধ সাথে কিছু সরকারি নিয়মের গেরোয় পর্যটন শিল্প মার খেতে বসেছে | তা সত্ত্বেও ভ্রমণ পরিকল্পনা মোটামুটি সবারই থাকে। তাই আজ একটু অন্য রাজ্যে ভ্রমণ এর কথা শেয়ার করা যাক।

ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বে রয়েছেযে সপ্তকন্যা তাদেরই একটি হল অসম | পশ্চিমবঙ্গের এই প্রতিবেশী রাজ্য খুব ই গুরুত্বপূর্ণ পর্যটকের কাছে। – পাহাড় নদী, জঙ্গল, অভয়ারণ্য সবই প্রায় রয়েছে এই রাজ্যে। আর আমাদের আজকের গল্পটিও এখানকার একটি জাতীয় উদ্যানকে ঘিরে যা ভারতবর্ষ খ্যাত। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন আমি কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের কথাই বলছি | একশৃঙ্গ খড়্গ বিশিষ্ট গন্ডারের চারণভূমি হিসেবে খ্যাত | তা চলুন কীভাবে যাবো তার একটা ধারণা দিয়ে দিচ্ছি –

কলকাতা বা শিয়ালদা অথবা যদি আপনি হাওড়া থেকে ভ্রমণ শুরু করতে চান তবে আপনাকে

হাওড়া থেকে –
১. ১২৩৪৫ হাওড়া গুয়াহাটি সরাইঘাট এক্সপ্রেস
২. ১৫৯৫৯ হাওড়া কামরূপ এক্সপ্রেস
৩. ১২৫০৯ হাওড়া গুয়াহাটি এক্সপ্রেস

শিয়ালদহ থেকে –
১. ১৩১৭৫ শিয়ালদহ গুয়াহাটি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস

কলকাতা থেকে –
১. ১৩১৮১ কলকাতা কাজিরাঙা এক্সপ্রেস
২. ১২৫২৫ কলকাতা ডিব্রুগর্ঠ এক্সপ্রেস

উপরিক্ত ট্রেনগুলি ধরে গুয়াহাটি জংশন স্টেশনে নামতে হবে , আপনি চাইলে কলকাতা থেকে বিমানে গুয়াহাটি ( লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ) পৌঁছতে পারেন |

গুয়াহাটি থেকেই বুক করে নিতে পারেন গাড়ি। সেই গাড়ি করে প্রায় ২০০ কিমি রাস্তা অতিক্রম করে পৌঁছে যান কাজিরাঙা উদ্যান এর গেস্ট হাউসে, অথবা ধানশ্রী রিসোর্ট, গ্রিন ভিলেজ রিসোর্টে। সেখানে রাত্রি যাপন করে পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়ুন কাজিরাঙা উদ্যান দেখতে |

এই উদ্যানটি তিনটি রেঞ্জে বিভক্ত –
১| কোহরা রেঞ্জ 
২| বাগোরি রেঞ্জ 
৩| আগরাতলি 
প্রতিটি রেঞ্জেই জিপ সাফারি পাবেন। এখানকার একটি বিশেষ আকর্ষণ পর্যটক দেড় জন্য সেটি হলো হাতির পিঠে চেপে জঙ্গল দর্শন তবে এই হাতি সাফারি কিন্তু বাগোরি রেঞ্জেই পাবেন শুধু। ভারতীয় পর্যটকদের জন্য কোহরা ও বাগোরি রেঞ্জে জিপ সাফারির মাথাপিছু ৩,৮০০ টাকা জনপ্রতি ও আগোরাতলি রেঞ্জে ৪৫০০ টাকা মাথাপিছু পড়বে। হাতি সাফারি জন্য পড়বে ১,৪৫০ টাকা মাথাপিছু।
ভোর ৫.৩০ টায় হাতি সাফারি শুরু হয় যদিও সেটি আবহাওয়ার উপর কিছুটা নির্ভর করে , যাই হোক হাতি সাফারি করে ফিরে এসে সকালের কিছু খেয়ে আসে পাশে একটু ঘুরে নিন তার পর দুপুরের খাবার খেয়ে বলা ২.৩০ নাগাদ বেরিয়ে পড়ুন জিপ সাফারি তে , চোখের সামনে দেখতে পাবেন এক শৃঙ্গ বিশিষ্ট গন্ডার , বন্য মহিষ, বড় দাঁতওয়ালা হাতি, হরিণ, বিভিন্ন পাখি, ভাগ্য ভালো হলে দেখা পেয়ে যেতে পারেন রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও। বেশ কিছু নদী চোখে পড়বে বনের মধ্যে। অনেক জলাশয় বিল খাল ও পড়বে তাতে দেখতে পাবেন কচ্ছপ ঘড়িয়াল, মাছ ইত্যাদি।

মুক্ত অরণ্যে আলাদাই এক অনুভূতি আসবে, যদি আপনি বন্যপ্রেমী হন তবে তো কোথায় নেই কাজিরাঙা ছেড়ে আসার ইচ্ছেই থাকবে না | রাতে ফিরে হোটেলে আঞ্চলিক অনুষ্ঠান দেখুন বনমুরগির রোস্ট খেয়ে সন্ধ্যে তা উপভোগ করুন। হাতে সময় নিয়ে গেলে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য জায়গা দেখে আসুন। আসে পাশের উল্লেখযোগ্য জায়গা নিয়ে খুব শিগগিরই আমরা শেয়ার করবো | মন বিষন্ন করে ফেরার উদ্দেশ্যে গাড়ি ধরলাম যদিও আমরা ওখানে ৪দিন ছিলাম তারপর ফিরছি। গুয়াহাটি থেকে দুপুর ১২:২০ নাগাদ ১২৩৪৫ গুয়াহাটি হাওড়া এক্সপ্রেস ধরে হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মাঠ ঘাট নদনদী পাহাড়কে পেছনে ফেলে এগিয়ে চললাম ঘরের উদ্দেশে।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post