আশা ছিল, মহালয়ার আগের দিন প্রথা মেনেই খুলবে ডুয়ার্সের জঙ্গল। করোনা আবহে চুরান্ত আর্থিক সংকটে থাকা পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ডুয়ার্সের বাসিন্দারা আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। কিন্তু করোনার প্রকোপের জেরে এবছর খুলল না ডুয়ার্সের দরজা। ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়ল পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের। একেই করোনা ও লকডাউনের জেরে লোকসানে চলছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এরওপর ডুয়ার্সের জঙ্গল বন্ধ থাকায় কিভাবে সংসার চলবে সেটা নিয়েই চিন্তিত ডুয়ার্সবাসী। ডুয়ার্স শব্দের অর্থ দরজা বা প্রবেশদ্বার। ডুয়ার্স মানেই পাহাড়ি নদী, ঘন জঙ্গল ও চারিদিকে সবুজে ঘেরা শান্ত পরিবেশ। ফলে প্রতিবছর পর্যটন মরশুমে ডুয়ার্সে ভিড় করেন অসংখ্য পর্যটক থেকে প্রকৃতিপ্রেমী। ফি-বছর বন্যপ্রাণীদের প্রজননের সময় ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকে ডুয়ার্সের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং জাতীয় উদ্যানগুলি।
এরপর দেশের অন্যান্য বনাঞ্চলের মতো ডুয়ার্সের জঙ্গলও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। কিন্তু চলতি বছরে করোনার জেরে দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে এদিন খুলল না জলদাপাড়া, বক্সা ও চিলাপাতা জঙ্গলের দরজা। ফলে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে এই অঞ্চলের পর্যটন ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে গাইড, সাফারি গাড়ির চালক সকলেই। ডুয়ার্সের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে রয়েছে অসংখ্য বন্যপ্রাণ। এই বনাঞ্চল মূলত গণ্ডার ও হাতির প্রধান বাসভূমি। এছাড়া এখানে বাঘ, চিতা, হরিণ ও অসংখ্য প্রজাতির পাখি রয়েছে। তবে ডুয়ার্স মানেই শুধু বনভূমি নয়। পাহাড়ি রাস্তা এঁকে বেঁকে মিশেছে দূরের পাহাড়ে। আলো আঁধারি পরিবেশ। কুশায়ার কারণে স্পষ্ট করে সবকিছু দেখা যায় না। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে শাল, সেগুন। এখানে-ওখানে দু-একটা ঘরবাড়ি।
চারদিকে সবুজে ঢাকা পাহাড়। ঠান্ডা মনোরম, নিঝুম, নিরিবিলি পরিবেশ। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমণ পিপাসুরা। অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ডুয়ার্স পর্যটকদের কাছে অন্যতম ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন। তাই পর্যটন ব্যবসায়ীরা বন দপ্তরের ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন জঙ্গলের দ্বার খোলার। কিন্তু করোনা তাঁদের সেই আশায় জল ঢেলে দিল। যদিও আলিপুরদুয়ার জেলা টুরিজম আ্যসোসিয়েশন ও জলদাপাড়া গাইড আ্যসোসিয়েশন আশা ত্যাগ করছে না। তাঁদের আশা আজ না খুললেও খুব শিগগির শুভ সংবাদ শোনাতে পারবেন জঙ্গলপ্রেমী পর্যটকদের।
যদিও জঙ্গল না খোলার জন্য এখনও পর্যন্ত পুজো বুকিং শুরু করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবছর ১৬ সেপ্টেম্বর জঙ্গল খুলে যায়। এবং ঝাঁকে ঝাঁকে পর্যটক আসতে শুরু করেন ডুয়ার্সে। পুজোর সময়েরও বুকিং শুরু হয়ে যায়। পাশাপাশি ডুয়ার্সে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সমস্ত লজ, হোম স্টে গুলো পর্যটক সমাগমে গিজগিজ করে। কিন্ত এবছর উধাও সেই চিত্র। আশা শীঘ্রই রাজ্যের পর্যটন দফতর ডুয়ার্সের দরজা খুলে দেবে।
Post a Comment
Thank You for your important feedback