রাতের শহরে ফের শ্লীলতাহানী, আটকাতে গিয়ে উদ্ধারকারী মহিলাকে পিষল দুষ্কৃতীর গাড়ি

শহরে রাতের অন্ধকারে এক তরুণীর শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন এক দম্পতি। এমনকি উদ্ধারকারী ওই মহিলার পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার মারাত্মক অভিযোগ উঠল একদল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। আপাতত উদ্ধারকারী ওই মহিলা বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনা শনিবার রাতের। কালিকাপুরের বাসিন্দা নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় মায়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দক্ষিণ কলকাতার আনন্দপুরে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন স্বামী দীপ শতপথী ও একমাত্র মেয়ে। রাত ১২টা নাগাদ তাঁরা নিজেদের গাড়িতে ফিরছিলেন। ওই দম্পতির দাবি, তাঁদের গাড়ির পিছনেই একটি হন্ডা সিটি গাড়ি থেকে ক্রমাগত এক মহিলার চিৎকার পাওয়া যাচ্ছিল। ফলে নীলাঞ্জনাদেবী স্বামীকে ওই গাড়িটি থামাতে বলেন। গাড়িটি আটকে দিতেই তিনি নিজেদের গাড়ি থেকে নেমে ওই গাড়ির সামনে যান।
তখনই ওই হন্ডা সিটি গাড়ি থেকে এক তরুণীকে ফেলে দেওয়া হয় রাস্তায়। নীলাঞ্জনাদেবী দ্রুত ওই তরুণীকে উদ্ধারের জন্য গেলে তাঁর পায়ের ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে হন্ডা সিটি গাড়িটি চালিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। দীপ শতপথীর দাবি, ‘অল্পের জন্য তাঁর স্ত্রীর মাথা বেঁচে গিয়েছে। নাহলে মারা পর্যন্ত যেতে পারতেন নীলাঞ্জনা’। এরপরই অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করেন তিনি। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ১০০ ডায়ালে ফোন করেন দীপ। এরপরই ঘটনাস্থলে আসে কসবা ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ। পরে কলকাতা পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে করেই হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয় নীলাঞ্জনাদেবীকে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দীপবাবুর দাবি, হন্ডা সিটি গাড়িটি থেকে রাস্তায় ফেলা দেওয়া তরুণীর পোশাক ছেঁড়া ছিল। তাঁর শরীরে একাধিক নখের আঁচড় ও মুখ ফোলা ছিল। ওই তরুণীকে ব্যপক মারধোরের পাশাপাশি শ্লীলতাহানী করা হয়েছিল এটা স্পষ্ট।
বেশি রাতে ঘটনাস্থলে আসে আনন্দপুর থানার পুলিশ। শ্লীলতাহানী হওয়া তরুণীকেও উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে ওই তরুণীর বাড়ি জলপাইগুড়িতে। কলকাতায় এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী, থাকেন নয়াবাদ এলাকায়। সপ্তাহ খানেক আগেই পরিচয় হওয়া এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর। শনিবার তাঁর সঙ্গেই ডেটিংয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। রাতে ফাঁকা রাস্তার সুযোগ নিয়ে তাঁকে শ্লীলতাহানী করে ওই যুবক। যদিও ওই দম্পতি রুখে দাঁড়ানোয় প্রাণে বাঁচলেন বলেই মনে করছেন নির্যাতিতা তরুণী। অপরদিকে গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছেন উদ্ধারকারী নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ডান হাটুর নীচ থেকে পুরো ভেঙে গিয়েছে। সিনবোন কয়েক টুকরো হয়েছে। মাথায় ৬টি সেলাই পড়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে আনন্দপুর থানার পুলিশ। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, পাশাপাশি চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে ওই হন্ডা সিটি গাড়িটিকে। পুরো ঘটনায় ফের রাতের কলকাতায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post