কৃষ্ণনগর চ্যাটার্জি বাড়ির ‘নীলদুর্গা’


বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আর দুর্গাপুজো নিয়ে সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কতই না কিংবদন্তী। স্থানভেদে, রূপভেদে মা দুর্গারও নানান রূপ, উপাচার। এমনই এক রূপ কৃষ্ণনগরের চ্যাটার্জি বাড়ির নীলদুর্গা। ২৮৮ বছরের প্রাচীন এই পুজো। ইতিহাসও বেশ চমকপ্রদ। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল এই চ্যাটার্জি বাড়ির দুর্গার রং নীল। কেন এমন হল? কথিত আছে বহু বছর পূর্বে রাতের অন্ধকারে দুর্গার মূর্তি রং করছিলেন বৃদ্ধ পটুয়া। কিন্তু অন্ধকারে ঠিকমতো দেখতে না পেয়ে তিনি মূর্তিতে নীল রং করে ফেলেন।


সেই রাতেই বাড়ির কর্তা এবং প্রধান পুরোহিতকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী, নীল রঙেই পুজো করতে হবে মা দুর্গাকে। পরদিন সকালে সকলে উঠে দেখেন নীল রঙেই সেজেছেন মা দুর্গা। সেই থেকেই এটাই রীতি হয়ে দাঁড়ায় কৃষ্ণনগর চ্যাটার্জি বাড়িতে। মার্কেণ্ডেয় পুরানে অপরাজিতা দেবী দুর্গার কথা উল্লেখ আছে। তবে সাধারণত দেবীদুর্গার ডানদিকে লক্ষ্মী-সরস্বতী বাঁদিকে কার্তিক গণেশ থাকে। কিন্তু রীতি উল্টো। বাড়ির মেয়ে হিসাবে পূজিত হন নীলদুর্গা। একসময় মাকে মহিষ বলি দেওয়া হত। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে সেই রীতিতে ছেদ পড়েছে। এখন চাল কুমড়োর বলি দেওয়া হয়। দশমী পান্তাভাত ও কচুর শাক খাইয়ে বিদায় জানানো হয় বাড়ির মেয়ে নীলদুর্গাকে।


বর্তমান এই পুজোর প্রধান কর্তা চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের পূর্ব পুরুষরা থাকতেন অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বামরাইল গ্রামে। সেখানেই প্রচলন হয়েছিল এই দুর্গাপুজোর। সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবার হওয়ার কারণেই এই পূজার প্রচলন হয়। কিন্তু দেশভাগ হওয়ার পর তাঁরা একরাতেই চলে আসেন নদিয়ার কৃষ্ণনগরের নাজিরা পাড়া এলাকায়। এই দেশে এসে প্রথম বছর সেরকম আয়োজন করতে না পারায় ঘট পুজোই করতে পেরেছিলেন তাঁরা। তারপর থেকে মহা ধুমধামেই নীলদুর্গার আরাধোনা হয়ে আসছে চ্যাটার্জি বাড়িতে। কিন্তু ৭৪ বছর পর কোভিড পরিস্থিতিতে সেই অবস্থায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন চ্যাটার্জি বাড়ির সদস্যরা। এবারের পুজো নমো নমো করেই সারবেন তাঁরা, বাইরের দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। এমনকি এই পরিবারের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সদস্যরাও এবার আসতে পারছেন না।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post