করোনা সংক্রমণ এবং দুর্গাপুজো

 

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আর সেই পুজোর আর বেশি দিন বাকি নেই। চলতি মাসের ২২ তারিখ হবে দেবীর বোধন, সেই হিসেবে পুজোর আর বাকি মাত্র সপ্তাহ দুয়েক। কিন্তু চলতি বছরের সব হিসেবই পাল্টে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। করোনার দাপটে অনেকটাই ফিকে এবারের পুজো পুজো ভাব। অন্যান্য বছরে এই সময় প্যান্ডেল বাঁধার কাজ থাকে প্রায় শেষের দিকে। কেনাকাটাও প্রায় সেরে ফেলেন গড়পড়তা বাঙালি। কিন্তু এবছর তার ছিঁটেফোঁটাও হয়নি। তবুও আনলক-পাঁচে অনেক কিছুর ওপরেই বিধিনিষেধ উঠেছে। আদৌ পুজোর আয়োজন করা সম্ভব হবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় দূর হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায়। পুজো আয়োজনের খরচ জোগান নিয়ে উদ্যোক্তাদের চিন্তা লাঘব করে এবছর ৫০,০০০ টাকা অনুদান ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ফলে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। অপরদিকে করোনার ভয় অনেকটাই কাটিয়ে গুটি গুটি পুজোর কেনাকাটায় বের হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ফলে সপ্তাহান্তে পরিচিত ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে কলকাতা ও জেলার দোকান-শপিং মলগুলিতে। এই পর্যন্ত সব ঠিক আছে, কিন্তু পুজোর দিনগুলিতে ভিড় নিয়েই চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। পুজো পরিক্রমার হাত ধরেই ফের রুদ্রমূর্তি ধরবে না তো করোনা সংক্রমণ? এই চিন্তাই এখন রাতের ঘুম উড়েছে রাজ্যে প্রশাসনের কর্তাদের। পুজোর কটা দিন বড় বড় পুজো মন্ডপে যে জনজোয়ার হয়, সেটা কিভাবে নিয়ন্ত্রন করা হবে সেটা নিয়ে চিন্তায় পুলিশ কর্তারাও। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জারি করা করোনা বুলেটিনের বিগত কয়েকদিনের পরিসংখ্যান দেখেই মূলত চিন্তিত চিকিৎসক মহল। কারণ এই পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে পুজোর বাজার শুরু হতেই ধীরে ধীরে সংক্রমণের হার বাড়ছে।

ফলে উদ্বেগের কারণ এখন পুজো দর্শনের ভিড়। সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আয়োজিত ওয়েবিনারে এই চিন্তারই প্রতিফলণ ঘটল। এই ওয়েবিনারে বেশিরভাগ বক্তাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পুজোর পর আরও একটা সংক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। ওই ওয়েবিনারে আলোচনায় আরও উঠে এসেছে ‘সুপার স্প্রেডার’দের নিয়ে। মূলত ২০-৪০ বছর বয়েসিরাই বিশেষজ্ঞদের মতে ‘সুপার স্প্রেডার’। এক স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, ‘এই বয়সের তরুণ-তরুণীরা হয়তো নিজেরা আক্রান্ত হচ্ছেন না। কিন্তু নিজেদের অজান্তে সংক্রমণকে বয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন’। বিশ্বজুড়েই করোনা ঠেকানোর মূল হাতিয়ার হল সামাজিক দূরত্ব। পাশাপাশি মুখে মাস্ক ও অন্যান্য সুরক্ষা বর্ম আবশ্যিক। কিন্তু ভারতের মতো দেশের বেশিরভাগ নাগরিকদের এই নিয়মনীতি মানানোটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post