মা দুর্গাই চেয়েছিলেন এই পোড়া মুখেই পুজো হোক এখানে। তাই সেই থেকে পোড়া মুখেই মা পুজিত হয়ে আসছেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়িতে। সারা জেলার অন্যান্য পুজোর তুলনায় এই ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব সম্পূর্ণই আলাদা। দেবীর সারা শরীরও মুখের মতো ঝলসানো তাম্র বর্ণের। এছাড়াও এখানে দেবী দুর্গার ডানদিকের পরিবর্তে বাঁদিকে থাকেন গণেশ। পূর্ববঙ্গের ঢাকা বিক্রমপুরের বাইনখাঁড়া গ্রামে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেশভাগের পর ভট্টাচার্য পরিবার চলে আসেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে। এরপর থেকে এখানেই হয়ে আসছে পারিবারিক দুর্গাপুজো। এই পুজোর বয়স ৪৩৫ বছর। বর্তমানে পুজোর জৌলুস কমলেও বনেদিয়ানা ও ঐতিহ্যে এতটুকু ভাঁটা পড়েনি ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোতে।
৪৩৫ বছর আগে বাংলাদেশে এই ভট্টাচার্যদের বংশধরেরা শুরু করেছিলেন মা দুর্গার পূজা। মূলত জমিদার বাড়ির শোভা ও আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্যই শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আরাধনা। কিন্তু পুজো শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই ভট্টাচার্য বাড়িতে ঘটে যায় এক ভয়ানক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশে ভট্টাচার্য বাড়ির দালানে দেবী দুর্গার মন্দিরের পাশে ছিল দেবী মনসার মন্দির। পুরোহিত মহাশয় মনসা পূজো করে দুর্গা পুজো করতে আসার সময় একটি কাক মনসা মন্দিরের ঘিয়ের প্রদীপের জ্বলন্ত সলতে নিয়ে নিয়ে উড়ে পালায়। আর উড়ে যাওয়ার সময় স্বলন্ত সলতেটি দুর্গা মন্দিরের প্রতিমার চালায় সেটি পরে যায়। আর তাতেই পুড়ে যায় দুর্গা মন্দির ও প্রতিমা। ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা ভাবেন মা দুর্গা বোধহয় তাঁদের পুজো আর চাইছেন না। সেই মোতাবেক পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
কিন্তু একরাতে মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান ভট্টাচার্য বাড়ির তৎকালীন প্রাণপুরুষ রামকান্ত ভট্টাচার্য। দেবী দুর্গা তাঁকে স্বপ্নেই আদেশ দেন, তাঁর পুজো যেন কোনওভাবেই বন্ধ না হয়, আর ওই পোড়া রূপেই যেন তাঁকে পুজো করা হয়। এরপর আর এই পুজো থেমে থাকেনি, মা দুর্গা পোড়া রূপেই পুজিত হয়ে আসছেন ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়িতে। জন্মাষ্টমী তিথিতে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে এই বাড়ির দুর্গা পুজোর শুরু। আগে পুজোতে জাঁকজমকের কোনও কমতি ছিল না। তবে বর্তমান বংশধরেরা কাজের তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে জাঁকজমকে কিছুটা হলেও ভাঁটা পড়েছে। কিন্তু পুজোর সমস্ত আচার ও রীতি মেনেই আজও পুজো হয় এই ভট্টাচার্য বাড়িতে।
Post a Comment
Thank You for your important feedback