তোপধ্বনিতে শুরু মল্লরাজাদের ১০২৪ বছরে পুজো

 

রাজা নেই, নেই রাজত্ব। কিন্তু হারিয়ে যায়নি হাজার বছরের বেশি প্রাচীন দুর্গাপুজা। প্রাচীন নিয়ম মেনে করোনা আবহের মাঝেই মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষনে গর্জে উঠল কামান জানান দিল মল্লরাজাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের মা মৃন্ময়ীর পুজো। ১০২৪ বছরে পদার্পণ করল মল্লরাজাদের প্রাচীন দুর্গাপুজা।
ইতিহাস বলে, ১৯তম মল্লরাজা জগৎমল্ল ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুপুরের জঙ্গলে শিকার করতে বেরিয়ে এক অলৌকিক দৃশ্য দেখে ছিলেন। সেইসময় দেবী মৃন্ময়ীর দর্শন পেয়ে তাঁর নির্দেশ মতো আজ যেখানে পূজা অর্চনা হচ্ছে সেখানেই মন্দির নির্মাণ করে গঙ্গামাটির তৈরি মা মৃন্ময়ীরূপী দুর্গার পুজো শুরু করেন তিনি। যা আজ থেকে প্রায় ১০২৩ বছর আগে ঘটনা।
মৃন্ময়ীর নির্দেশ মতো বিষ্ণুপুরে মল্লরাজ পরিবারের কুলদেবী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান দেবী মৃন্ময়ী । তৎকালীন জঙ্গলাকীর্ণ বিষ্ণুপুরের জঙ্গল সাফ করে স্থাপিত হয় প্রাচীন সার্বভৌম মল্লভূমের রাজধানী। মৃন্ময়ীর কৃপায় শুরু হয়েছিল মল্লরাজাদের রাজত্ব। ফুলে ফেপে উঠে রাজকোষ। ধুমধাম করে মৃন্ময়ীর পুজোতে মেতে থাকতেন মল্লরাজারা সেই রীতি আজো অক্ষুন্ন থাকলেও পুজোর জৌলুস এখন বেশ ফিকে।
পুজোর রীতি নিয়মে আজ রয়েছে প্রাচীনত্ব যা অন্যান্য পুজো মণ্ডপের থেকে অনেকটায় আলাদা। বলিনারায়ণী পুঁথি মেনে পুজো হয় এখানে। নবমাদি কল্পারম্ভ জিতাষ্টমীর পরের দিন শুরু হয় মল্লরাজাদের প্রাচীন দুর্গাপুজো। পুজো শুরুর জানান দিতে দেওয়া হয় তোপধ্বনি। পুজোর সময় তিনটি তিথিতে পটের তিন দেবীর তিনটি রূপের আগমন হয়। জিতাষ্টমীর পরদিন নিয়ম মেনে প্রাচীনমন্দিরে আসেন পটের বড় ঠাকুরানী অর্থাৎ মহালক্ষ্মী । এরপর মান চতুর্থীর দিনে একই নিয়ম মেনে মন্দিরে আসেন মেজ ঠাকুরানি অর্থাৎ মহা সরস্বতী । সপ্তমীর সকালে মন্দিরে আনা হয়েছে ছোট ঠাকুরানী অর্থাৎ মহাকালীকে । এই পটের বিভিন্ন রূপের পুজো চলে পুজোতে।

মহা অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে স্থানীয় মোর্চা পাহাড়ে বড় কামানের তোপধ্বনি দেখতে ভিড় জমে মানুষের নবমীর নিশুতি রাতে রাজ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে পুরোহিত মশাই উলটো দিকে মুখ করে খচ্চরবাহিনীর পুজো করেন। সেই সময় মল্ল গড়ে মহামারীর প্রকোপ বেড়ে গিয়েছিল এবং এই মহামারীর হাত থেকে প্রজাদের বাজাতে খচ্চর বাহিনীর আরাধনা করা হয়। যা আজ চল রয়েছে মন্দিরে। বিজয়া যাত্রা করা হয় নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে। মৃন্ময়ীর এই পুজোকে ঘিরে শুধু রাজ পরিবারের নয় আবেগ জড়িয়ে রয়েছে বিষ্ণুপুরের আপামর জনগণের। করোনা বিধি মেনেই সম্পন্ন হচ্ছে মল্লরাজাদের প্রাচীন দুর্গাপুজা। শুধু রাজ পরিবারের সদস্য ও পুরোহিতরা মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করছেন। করোনা পরিস্থিতিতে দর্শনার্থীদের মন্দিরের বাইরে থেকেই পুজো এবং দেবীকে দর্শনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

أحدث أقدم