ওঁরা রাজ্যের বিজ্ঞাপনের মুখ। রঙচঙে হোর্ডিং থেকে রাজপথের শোভাযাত্রা, সরকারি অনুষ্ঠান থেকে বাবুদের দামি ড্রয়িং রুম সবখানেই এরাজ্যের লোকশিল্পের তারাই প্রতিনিধি। ওঁদের ডাক পড়ে পুজো এলে। ক্লাবে ক্লাবে পৌঁছেছে সরকারি অনুদান। অথচ সামান্য সাহায্যটুকুও কপালে জোটেনি পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ শিল্পীদের।
প্রত্যন্ত পুরুলিয়ার অন্যতম সেরা আকর্ষণ ছৌ নাচ। কিন্তু করোনা কালে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই বছরটা ঘরে বসেই কাটছে ছৌ শিল্পীদের। ছৌ শিল্পীদের রোজগার বন্ধের সাথে সাথে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই নাচে ব্যবহৃত মুখোশ যারা তৈরি করেন তাদেরও।
পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের চড়িদা গ্রাম ও পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়া এলাকায় এমন অনেক ছৌ মুখোশ শিল্পী টানা ৬-৭ মাস কর্মহীন। ছৌ নাচ বন্ধ থাকায় মুখোশের চাহিদা নেই , অন্যদিকে কোভিড নির্দেশিকার জন্য জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলি এতদিন বন্ধ থাকায় পর্যটকরাও আসেননি। তাই ঘর সাজানোর জন্য অন্য সময়ে যে ছৌ মুখোশ বিক্রি হয় এবছর তাও হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম ছৌ মুখোশ শিল্পীরা। অন্যান্য বছর পুজোর সময়ে থিম পুজোর জন্য এই মুখোশ মণ্ডপসজ্জায় অনেক জায়গায় ব্যবহার করা হত। কিন্তু এবছর পুজোর বাজেটেও কাঁটছাট হয়েছে তাই সেই চাহিদা নেই। এখন পুজোর মুখে ছেলেমেয়েদের হাতে নতুন জামা কাপড় তুলে দেবেন কীভাবে , ভেবে উঠতে পাচ্ছেন না শিল্পীরা।
অনেকেই পেটের টানে নিজেদের পেশা বদলেছেন। সংসারে নিত্যদিনের অভাব-অনটন দেখতে দেখতে নতুন প্রজন্ম মুখ ফিরিয়েছে পারিবারিক এই পেশা থেকে। কিন্তু ভালোবাসার টানে যাঁরা পারেননি, তাঁরা লড়াই চালাচ্ছেন টিঁকে থাকার। কষ্টের এই সময়ে সরকারের তরফে রেশনের চাল-গম ছাড়া আর কিছু জোটেনি, কোনও অর্থ সাহায্য পাননি অসহায় এই শিল্পীরা।
Post a Comment
Thank You for your important feedback