করোনা ভয় কাটিয়ে কলকাতার কাছেপিঠে প্রকৃতির কোলে

 

একে তো করোনার ভয়, তার ওপর কার্যত বন্ধ ট্রেন পরিষেবাও। কবে পুরোদস্তুর ট্রেন চালু হবে সেটাও জানায়নি রেল। ফলে এবারের পুজোয় পর্যটনের কী হবে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অবশ্য আনলক-৫ পর্বে পর্যটনের দরজা খুলে দিয়েছে। ফলে কোভিড বিধি মেনে ব্যাগ গুছিয়ে কাছে পিঠে কোথাও বেরিয়ে পড়লেই হয়। কিন্তু যাবেন কোথায়? আপনাদের জন্য রইল কলকাতার কাছেই কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। যেগুলি হয়তো অনেকেই নাম জানেন না, বা অল্প পরিচিত। অথচ প্রকৃতি, ঐতিহ্যে সৌন্দর্যে ভরপুর এই জায়গাগুলো। শীতের রোদ গায়ে মেখে দেশ-বিদেশের পাখির কলতান শুনতে এই জায়গাগুলো যেতেই পারেন কয়েকটা দিন শহর থেকে দূরে থাকতে।

Jhargram

চুপি (পূর্ব বর্ধমান)

প্রথাগত টুরিস্টদের ভিড় নেই পূর্ব বর্ধমানের চুপিতে। গঙ্গা নদীতেই তৈরি হয়েছে একটি অশ্বক্ষুরাকৃতি হৃদ। আর ওই হৃদ বা জলাশয় ঘিরেই এই পর্যটন কেন্দ্র। শীত পড়তেই এখানে চলে আসে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। নাম না জানা পাখি দেখতে চলেই আসতে পারেন চুপিতে। সারাদিন নৌকায় ভেসে বেরিয়ে দুই-তিন কিলোমিটার ব্যাপি এই জলাশয়ে সময় কেটে যাবে পাখির গান শুনতে শুনতে। এখান থেকে মায়াপুর ও কৃষ্ণনগর বেশি দূরে নয়। ফলে একদিন সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন। চুপির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ অবশ্য এখানকার নলেন গুড়। ফলে ঘোরার সঙ্গে পেট পুজোরও দেদার মজা পাবেন চুপিতে। নলেন গুড়ের সন্দেশ, রসগোল্লা খেয়ে পরিচিতদের জন্য কিনে বাড়ি ফিরুন একরাশ ভালোলাগা নিয়ে।

কীভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন ?

হাওড়া বা শিয়ালদা বর্ধমান যাওয়ার মেন লাইনের ট্রেন ধরে পূর্বস্থলী স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশা/টোটো করে যেতে হবে চুপি। এখানে থাকার ভালো জায়গা নেই। তাই নবদ্বীপ বা মায়াপুরে থেকে একদিনের জন্য ঘুরে আসা যায় চুপি। সড়কপথে সরাসরি যাওয়া যায় চুপি।

ভালকিমাচান (পূর্ব বর্ধমান)

ভালকিমাচান, নীল আকাশের নীচে শাল, পিয়াল, সোনাঝুরি ফুলের রাজ্য। ফলে নির্জন অরণ্য ও আদিবাসী গ্রামের মজা একত্রে নিতে হলে চলে আসুন ভালকিমাচান। জঙ্গলের মধ্যেই বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গ্রাম, আঁকাবাঁকা পিচের রাস্তা। আর পাখির কলতান। ভালকিমাচানে শীতে রঙের প্রলেপ লাগে। সোনাঝুড়ি ফুলে ভরে যায় জঙ্গল। হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার নিয়েই একেকটি গ্রাম। ফলে শান্ত, নির্জন পরিবেশ। তাই শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে এক-দুই দিন অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায় ভালকিমাচানে। ধামসার আওয়াজ ভেসে আসে বহুদূর থেকে। এখানে রয়েছে ভল্লু রাজার প্রাচীন দুর্গ। রাত নেমে আসলেই আপনি ফিরে যাবেন প্রাচীন কালে। ঝিঝির ডাক ও মাঝে মধ্যে দূর থেকে ভেসে আসা ধামসা-মাদলের শব্দ।

কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন ?

হাওড়া থেকে বোলপুরগামী ট্রেনে গুসকরা স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে ভালকির জঙ্গল মাত্র ২২ কিমি। অটো বা ভাড়া গাড়ি পাওয়া যায়। গাড়িতে সড়ক পথে যেতে হলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমানের পারাজ থেকে ডান দিকে অভিরামপুর হয়ে সোজা ভালকি মাচান। ভালকির জঙ্গলে থাকার জন্য মাত্র একটিই হোটেল যার নাম ‘অরণ্যসুন্দরী’। আশেপাশে নেই কোনও ঘরবাড়ি। ফলে নির্জনতা প্রিয় মানুষদের কাছে এটি স্বর্গরাজ্য।

বেলপাহাড়ি-কাঁকড়াঝোড়

ঝাড়গ্রাম থেকে ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে সিংলহর পাহাড়ের গায়ে বেলপাহাড়ি-কাঁকড়াঝোড়। এখানে বুনো হাতিদের বিচরণক্ষেত্র। পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য বনবিভাগের এখানে একটি সুন্দর বাংলো রয়েছে । কাছেই ময়ূরঝর্ণা প্রকৃতি এখাণে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। বেলপাহাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। দলমা পাহাড়ের নীচে এই অরণ্য যেন সৌন্দর্যের আঁতুড়ঘর। শাল, মহুয়া, পিয়াল, সোনাঝুরি, শিরিষ, ইউক্যালিপটাস গাছে নিয়েই বেলপাহাড়ির জঙ্গল। সুন্দর নৈসর্গিক নির্জন পরিবেশের মাঝে এখানকার সহজ সরল মানুষজন। মকর সংক্রান্তিতে এলাকা জুড়ে চলে টুসুর উৎসব। বেলপাহাড়ি থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে স্বপ্নপুরী ঘাঘরা। পাহাড়ে ঘেরা চার পাশে সবুজ শালের সমারোহ। আর মাঝে বিস্তীর্ণ ব্ল্যাক স্টোনের অজস্র গহ্বর ভেদ করে সাপের ফনার মতো ফুসছে জলরাশি। জলের আঘাতে এখানকার পাথরগুলির আকৃতি কলসি বা গাগড়ির মতো। স্থানীয় ভাষায় তাকে বলে ‘গাগরা’।

তাই জায়গাটির নাম ঘাঘরা। বেলপাহাড়ি থেকে ২৮ কিমি দূরে কাঁকড়াঝোড়। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বন্ধুর, চড়াই-উতরাই পথ। মানুষজনের দেখা খুব একটা মেলে না এই পথে, এই পথে নির্জনতাই বড় প্রাপ্তি। পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি অরণ্যে ঘেরা ট্রেকিং পয়েন্ট হল কাঁকড়াঝোড়। স্থানীয় ভাষায় কাঁকড়া শব্দের অর্থ পাহাড় এবং ঝোড় শব্দের অর্থ জঙ্গল। ৯০০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে এই বনাঞ্চল। কুসুম, শাল, সেগুন, মহুয়া, আকাশমণি গাছ রয়েছে এই জঙ্গলে। এখানে কাজু বাদাম, কফি ও কমলালেবুর চাষ হচ্ছে ইদানিং। এখানেই আপন খেয়ালে শুঁড় দুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় বুনো হাতির দল। মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায় টিয়া, নীলকণ্ঠ-সহ কত ঝাঁক ঝাঁক পাখি। বিদ্যুৎ নেই কাঁকড়াঝোড়ে তাই রাতে কেরোসিনের আলোই ভরসা। ফলে টর্চ আর মশা তাড়ানোর ধূপ বা মশা নিরোধক ক্রিম সঙ্গে রাখা ভালো। এখানে থাকার জন্য আছে বন দফতরের পর্যটক আবাস এবং কয়েকটি বেসরকারি হোটেল।

কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?

হাওড়া থেকে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ার ট্রেন ধরে চলে আসা যায় বেলপাহাড়ি। এছাড়া সড়কপথে সোজা বেলপাহাড়ি-কাঁকড়াঝোড়। ঝাড়গ্রামে রয়েছে অনেক হোটেল রিসর্ট। কাঁকড়াঝোড়ে থাকার জন্য রয়েছে বনবিভাগের বাংলো, পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post