তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী? সিএন-কে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন রাজীব


বিগত কয়েকদিন ধরেই দলের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার এক অরাজনৈতিক মঞ্চে শ্রীরামকৃষ্ণের 'যত মত তত পথ' বাণীকে অনুসরণ করে তাঁর এক মন্তব্যের পরই বাংলার রাজনৈতিক মহলে তীব্র হয় জল্পনা। তবে কী তিনিও শুভেন্দু অধিকারীর পথেই হাঁটবেন? কিন্তু সেই পথ কি তা নিয়ে ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছেন বনমন্ত্রী।

 সিএন-কে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি ব্যাখ্যা দিলেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগের। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে মানুষের রায়ই শেষ কথা, তাই মানুষকে সম্মান দিতে হবে। তাই যতদিন রাজনীতিতে থাকবেন, ততদিন মানুষের সেবা করবেন বলেই জানিয়েছেন তিনি। রাজীবের দাবি, আমি কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি সেটা কখনও বলিনি বা কোনও চিন্তাভাবনা আছে সেটাও বলিনি। শনিবারই দলের শীর্ষনেতৃত্বের তরফে সমস্যা মেটানোর জন্য রবিবার তাঁর সঙ্গে বৈঠকের  জন্য ফোন গিয়েছে। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে যোগ দেবেন বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক।


      
বর্তমান প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেসে তাঁর অবস্থান নিয়ে জল্পনার মধ্যেই একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি এখনও তৃণমূল কংগ্রেস ও মন্ত্রিসভার সদস্য। জল্পনা রাজনীতিতে সবসময় থাকবে। তিনি স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সবসময় মানুষের জন্য কাজ করবেন। যদিও দল বদলের সম্ভবনার কথা সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেও তাঁর ক্ষোভের কথা অস্বীকার করেননি বনমন্ত্রী।


 এবিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই তৃণমূল করা, অস্বীকার করার জায়গা নেই তাঁর হাত ধরেই সাধারণ কর্মী থেকে এই জায়গায় এসেছি। কিন্তু এটাও ঠিক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে দলের কোনও বিষয় আমার খারাপ লেগেছে। অন্য কোথাও, কোনও জায়গায় হয়ত আমার মনে হয়েছে আমি আঘাত পেয়েছি, কোনও কাজ আমায় কষ্ট দিয়েছে। তাই আবেগতাড়িত হয়েই কিছু কথা বলেছি”। 

 

রাজীবের কথায়, স্পষ্ট কোথায় কষ্ট নেই, সরল ভাবে মানুষের সামনে নিজের মনের কথা বলার চেষ্টা করেছি। এনিয়ে নতুন করে বিতর্ক হোক তিনি চান না। তাঁর কথায়, সেসব বলার সময় এখনও আসেনি। তবে রাজনীতিতে পোড়খাওয়া এই নেতার কথায় দলের কিছু কার্যকলাপ নিয়ে অসন্তোষ স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘আমি তৃণমূলের একজন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কর্মী। মানুষের জন্যই কাজ করলে অনেক সময় ঘাত-প্রতিঘাত পেতে হয়’। 




প্রসঙ্গত, বিগত কয়েকদিন ধরেই কলকাতা সহ রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় রাজীব বন্দোপাধ্যায়ের নামে পোস্টার চোখে পরছে। তাতেও  শুভেন্দু অধিকারীর মতই   দাদার অনুগামী লেখা পোস্টারের অনুকরণে একইরকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। এমনকি কিছু কিছু পোস্টারে সততার প্রতীক বলেও রয়েছে তাঁর নাম। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, " মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজনই। তাঁর সঙ্গে কোনওভাবেই আমাকে যদি কেউ তুলনা করে তা খুবই ভুল হচ্ছে। হয়ত রাজনৈতিক জীবনে আমার ভাল কাজের সুবাদে রাজ্যে বা বিভিন্ন জেলায় কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী আছেন, তাঁরা হয়ত অত্যুৎসাহী হয়ে এগুলো করে থাকতে পারেন। কিন্তু এই ধরণের প্রচার আমার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করিনা”।


শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ইতিমধ্যেই দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাঁর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিয়ে বনমন্ত্রীর বক্তব্য, শুভেন্দু এখনও দলেই আছেন। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে নিজের মতামত জানিয়েছেন। এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য তিনি করবেন না। 




 আর কয়েকমাস পরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তাঁর গলায় নিজের দলের বিরুদ্ধেই এমন বেসুর কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বিধায়কের দাবি, নির্বাচনের আগে এভাবে ব্যাখ্যা করতে চাননি। একটা অরাজনৈতিক মঞ্চে কোথাও হয়ত আবেগের মধ্যে থেকেই ওই কথা বলেছেন। তবে ভবিষ্যতেও কিছু মনে হলে বলবেন।   
 

তবে আগামীদিনে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি হবে সে নিয়ে খোলসা করে কিছু না বললেও জপ্ল্পনা জিইয়ে রাখলেন বিধায়ক। তাঁর কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত, তিনি স্বাধীন ভাবে, সম্মানের সঙ্গে, স্বাচ্ছন্দ্যে মানুষের জন্য কাজ করতে চান। মানুষের জন্য কাজ করতে হলে তাঁকে রাজনীতিতেই থাকতে হবে। মানুষ ও কর্মী সবাই কে সম্মান দিতে হবে। তাই মানুষের জন্য যদি কাজ করার জন্য তাঁর অবস্থানগত ভাবে কখনও পরিবর্তনের করলে নিশ্চিত ভাবে মানুষকে জানিয়েই করবেন। দলের সঙ্গে আদর্শগত পার্থক্যের বিষয়ে তাঁর মত, আদর্শগত খামতি হচ্ছে কিনা বাংলার মানুষ বিচার করবেন। গণতন্ত্রে মানুষের রায়ই শেষ কথা।       


     

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post