বছরের পর বছর কেটে যায়, কিন্তু বাড়ে না মজুরি। চরম আর্থিক অনটনে দিন কাটছে জঙ্গীপুরের বিড়ি মহল্লার মানুষদের। মুর্শিদাবাদের সুতি ১ নম্বর ব্লকের বংশবাটি, আহিরণ, হারুয়া গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারই বংশ পরম্পরায় বিড়ি বেঁধেই সংসার চালান। জেলার অর্থনীতির অনেকটাই এই বিড়ি শিল্পের ওপরেই নির্ভরশীল। এই জেলাতেই রয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক। শুধুমাত্র জঙ্গিপুর মহকুমাতেই এই সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ।
করোনায় আর্থিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়েছেন জনসাধারণ। এর প্রভাব থেকে বাদ পড়েননি বিড়ি শ্রমিকরাও। তবে তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয়। শুধু এই এক বছর নয়। এই পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি তিন বছরেও। কুলো হাতে দিনরাত বিড়ির পাতা, মশলা বাধার কাজ করলেও মুখে হাসি ফোটে না বিড়ি শ্রমিকদের। হাজার বিড়ি বেঁধে মাত্র ১৫২ টাকা মজুরিতে সংসার চালাতে হয়।
বিড়ি শ্রমিক পূজা সাহা জানান, 'এখন দেড়শো টাকা মজুরিতে কাজ করি, সপ্তাহে রোজ কাজ পাই না। এই সব নিয়ে সংসার চালাবো কীভাবে?' মাজেরা বিবির অভিযোগ, অনেক সময় দেড়শো টাকাও পাই না, দুই মুঠো বিড়ি পট্টি বলে ফেলে দেয় মালিকরা। একই কথা রোজি বিবি , আয়না বিবিদের মুখেও।
গত বছরের মার্চ থেকেই জঙ্গিপুরের বিড়ি শিল্পাঞ্চলের সমস্ত বিড়ি কারখানা বন্ধ। কাজ হারিয়ে ছিলেন প্রায় ৬ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক। পরে বিড়ি বাঁধার কাজ শুরু হলেও লকডাউনের জন্য সরবরাহের অবস্থা ঠিক হতে লেগে যায় অনেকটা সময়। অথচ বিড়ি শিল্পাঞ্চলে বহু ছোট ছোট বিড়ি কারখানা রয়েছে যার মালিকরা ২০ থেকে ৫০ হাজার বিড়ি বাঁধিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। শ্রমিকদের অভিযোগ, এই সুযোগে বেকার শ্রমিকদের কম মজুরিতে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এদিকে ক্রমশ বেড়ে চলেছে জিনিসপত্রের দাম। বিড়ি শ্রমিকরা বঞ্চিত তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে। নতুন বছরে মজুরি বাড়বে কিনা সেই অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন সুতির বিড়ি শ্রমিকরা।
Post a Comment
Thank You for your important feedback