রাজ্য জুড়ে চলছে ধরনা-বিক্ষোভ, জেরবার তৃণমূল সরকার

শিয়রে বিধানসভা নির্বাচন। একদিকে ‘দুয়ারে সরকার’ সহ নানা প্রকল্প নিয়ে রাজ্যবাসীর সমস্যার সমাধানে পথে নেমেছে তৃণমূল সরকার। অন্যদিকে সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক বঞ্চনা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ-ধরনায় সামিল হয়েছেন পার্শ্বশিক্ষক, শিক্ষক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, টেট পরীক্ষার্থী, অস্থায়ী কর্মচারী থেকে শুরু করে একাধিক রাজ্য সরকারী সংস্থার কর্মীরা। অভিযোগ, প্রতিশ্রুতিই সার, বারবার আবেদন-নিবেদন জানালেও হুঁশ ফেরেনি সরকারের। ফলে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে আন্দোলনকারীদের মধ্যে। তাই বিগত কয়েক দিন ধরে আন্দোলনের ঝাঁঝ বেড়েছে আন্দোলনকারীদের। কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই ধরা পড়ছে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ।

পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের অনশন-বিক্ষোভ

বেতন বৃদ্ধি, স্থায়ীকরণ সহ কয়েকটি দাবিতে প্রায় ১৮ দিন ধরে বিকাশভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের সদস্যরা। কয়েকমাস আগে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সেখানেই ধরণা ও অনশন করেছিলেন। কিন্তু বারবার নিজেদের আবেদন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা দফতরে জানানোর পরও মেলেনি সদুত্তর। তাঁদের দাবি, শিক্ষামন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ হয়নি। এবারও বিকাশ ভবনে ১৮ দিনে পড়ল পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের অবস্থান বিক্ষোভ। শেষপর্যন্ত নিজেদের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার ফের পথে নামতে বাধ্য হন তাঁরা। বিক্ষোভকারীরা জানান, ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দিনের পর দিন সরকারের বঞ্চনা তাঁদের বিশ্বাসভঙ্গ করেছে। তবু এখনও তাঁদের আশা মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের কথা ভাববেন। এদিন প্রথমে কলকাতার মৌলালির কাছে প্রথমে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি করেন তাঁরা। পরে মৌলালি মোড়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান পার্শ্বশিক্ষকরা। 

এসএলএসটি ও পুরস্বাস্থ্যকর্মীদের বিক্ষোভ


 অপরদিকে চাকরির দাবিতে শিয়ালদহেও বিক্ষোভ মিছিল করেন এসএলএসটি চাকরি প্রার্থীরা। পাশাপাশি বেতন বৃদ্ধি সহ একাধিক দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর খাস তালুক রাসবিহারী মোড়ে বিক্ষোভ দেখান পুরস্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরা জানান, বেতন বৃদ্ধি ও অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো এবং অবসরকালীন ভাতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। পুরমন্ত্রী বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি নির্দেশনামা জারি করা হয়নি। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে সরকারি নির্দেশ নামা ঘোষণা করতে হবে।

আইসিডিএস কর্মী সমিতির বিক্ষোভ

একই সঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আই.সি.ডি.এস কর্মী সমিতি। তাঁদের মূল দাবি,  ২০১৪ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ কর্মী ও সহায়িকাদের ৬৫ বছর বয়স হলেই কাজ থেকে অবসর নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে তাঁরা লাগাতার আন্দোলন করছেন। সম্প্রতি রাজ্য সরকার কর্মী সহায়িকাদের তিন লক্ষ টাকা বিদায়ী ভাতা হিসেবে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে যাঁরা অবসর নেবে তাঁদের দেবে বলে ঘোষণা করে। তাঁদের দাবি, এই টাকা ২০১৪ সাল থেকে যাঁদের অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে তাঁদেরও দিতে হবে। এছাড়া সরকারি কর্মচারী হিসেবেও স্বীকৃতি সহ বিভিন্ন দাবি তোলেন। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাছে নবান্নে এবং রাজ্যপালের কাছে তাঁরা ডেপুটেশন জমা দেবেন বলে জানান। 

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কর্মীদের বিক্ষোভ

শুধু কলকাতাই নয় রাজ্য জুড়েই চলছে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলন। সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সোচ্চার হয়েছেন সাধারণ মানুষরাও। এবার বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র ফার্মগুলিতে কর্মরত অস্থায়ী কর্মীরা স্থায়ীকরণ সহ একাধিক দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। তাঁদের দাবি, সকল প্রকার অস্থায়ী কর্মীদের প্রতি মাসে নির্ধারিত কাজের দিন ও মাসিক বেতন ভিত্তিক কর্মী হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। তাঁদের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার শূন্যপদে অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগ করতে হবে। এছাড়া আপৎকালীন দুর্ঘটনার জন্য চিকিৎসা বীমাও চালু করতে হবে। অবিলম্বে এই দাবিগুলো পূরণ না হলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।  

  


Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post