ভোট ঘোষণা আগেই হয়েছে, আগামী ২ মে জানা যাবে যে কারা নীলবাড়ি দখল করবে। তৃতীয়বারের জন্য কী ফের নবান্নের ১৪ তলায় দেখা যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? নাকি বঙ্গ বিজেপির বঙ্গ দখলের স্বপ্ন পূরণ হবে। অপরদিকে বিশাল ব্রিগেড সমাবেশ করে বাম-কংগ্রেস-আব্বাসের ‘সংযুক্ত মোর্চা’ বুঝিয়ে দিল তাঁরাও আছেন লড়াইয়ে। পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪ আসনের মধ্যে রাজ্যবাসীর এবার নজর থাকবে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রেরক দিকে। এখানকার পদত্যাগী তৃণমূল বিধায়ক বর্তমানে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আর এই আসনেই ভোটে লড়তে চাইছেন সয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ও বিজেপি কেউই এখনও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। কিন্তু অনেকেই ধরে নিচ্ছেন নন্দীগ্রামে এবার লড়াই মমতা বনাম শুভেন্দুর মধ্যে।
এটা হলে নন্দীগ্রামই হবে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ হাই প্রোফাইল বিধানসভা আসন। না হলেও এই কেন্দ্রের দিকে নজর থাকবে আম জনতার। এর কারণও আছে, নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকেই রাজ্যে উত্থান হয়েছিল তৃণমূলের। তাই ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এসে তৃণমূল নেত্রী সুচতুরভাবেই নন্দীগ্রামে ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন। কারণ এবারের ভোট যে যথেষ্ঠই কঠিন। আর এই অবস্থা আরও কঠিন করে দিল বাম-আব্বাস জোট। কারণ নন্দীগ্রামে তাঁদের বহু পুরোনো সিট এবার আব্বাসের নতুন দলকে ছেড়ে দিয়েছে সিপিআই। ফলে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত নন্দীগ্রামে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে আরও ফাটল ধরবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এই বিধানসভা আসন অধিকারীগড় মেদিনীপুরের বুকে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই জেলায় শিশির অধিকারী এবং তাঁর ছেলে শুভেন্দু অধিকারীর হাতেই তৈরি হওয়া সংগঠন তৃণমূলের। কিন্তু একুশের ভোটের আগেই পরিস্থিতি আচমকা বদলে গিয়েছে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে শুভেন্দু অধিকারী। তবে কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী তথা শুভেন্দুর বাবা এখনও নীরব রয়েছেন। যদিও তিনি তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন না আপাতত। ফলে শুভেন্দুর হাতে তৈরি তৃণমূলের সংগঠন তাঁর সঙ্গেই ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে বলা চলে। তাঁর সঙ্গেই বিজেপির পথে পা বাড়িয়েছেন ‘দাদার অনুগামী’রা।
ফলে বর্তমানে নন্দীগ্রামে নতুন করে সংগঠন সাজাতে হচ্ছে তৃণমূলকে। এর ওপর আবার তৃণমূল নেত্রী নিজেই নন্দীগ্রামে ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন। তাই রীতিমতো কোমর বেঁধে ময়দানে নামছে তৃণমূল। শুভেন্দুর পরিবর্তে এবার নন্দীগ্রামে ভোট করানোর দায়িত্ব থাকবে অখিল গিরির ওপর। রবিবার বাম ব্রিগেডের দিনই একাধিক বৈঠক করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা যাচ্ছে সোমবারই তিনি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন। এখন দেখার তিনিই ‘লাকি’ নন্দীগ্রামে প্রার্থী হন কিনা।
এবার দেখে নেওয়া যাক বিগত নির্বাচনগুলিতে এই বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল সম্পর্কে। ২০১১ সালের জনগননা অনুযায়ী নন্দীগ্রামের জনসংখ্যা ৩ লাথ ৩১ হাজার ৫৪ জন। এরমধ্যে ৯৬.৬৫ শতাংশ বসতি গ্রামীন এলাকায় এবং মাত্র ৩.৩৫ শতাংশ বসতি শহরাঞ্চলে। ২০১৬ সালের বিধানসভায় নন্দীগ্রামে ৮৬.৯৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল যেখানে ২০১৯ সালের লোকসভায় ভোট পড়েছিল ৮৪.১৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে নন্দীগ্রামে জিতেছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৩ ভোট। সিপিআই-এর আব্দুল কবির শেখ পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ২৯২ ভোট এবং বিজেপির বিজন কুমার দাস পেয়েছিলেন মাত্র ১০ হাজার ৯৬ ভোট।
২০১৯ সালের লোকসভায় আবার বেশ কিছুটা জমি নিজেদের দখলে নিয়ে আসে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৯, সেখানে বিজেপি পায় ৬২ হাজার ২৬৮ ভোট। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব কতটা। তবে লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিজেপি নিজেদের সংগঠন কিছুটা তৈরি করেছিল। এবার তাঁদের দিকেই নন্দীগ্রামের বিদায়ী বিধায়ক। ফলে বিজেপি এবার বাড়তি অক্সিজেন নিয়েই ময়দানে নামছে। রাজনৈতিক মহলের মতে একুশের লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। যার দিকে অধীর আগ্রহে তাঁকিয়ে বঙ্গবাসী।
Post a Comment
Thank You for your important feedback