জনতা কার্ফুর এক বছর পূর্তি, ফের ফিরে এল সেই করোনাতঙ্ক

ভারতে তখন করোনা সবেমাত্র ফনা তুলছে। করোনা কি, খায় নাকি মাথায় দেয় সেটা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়নি দেশবাসীর কাছে। গত বছরের ২১ মার্চ সন্ধ্যায় আচমকাই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নোটবন্দির মতোই তিনি ঘোষণা করলেন পরদিন অর্থাৎ ২২ মার্চ দেশজুড়ে পালিত হবে ‘জনতা কার্ফু’। সোমবার সেই জনতা কার্ফুর এক বছর পূর্ণ হল। কিন্তু কতটা কমল করোনার বাড়বাড়ন্ত? এক বছর আগে এই দিনে ভারতে করোনার দাপট এতটা ছিল না। কিন্তু বিগত সময়ে করোনার থাবা গোটা ভারতেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।  

এরপর লকডাউন, নাইট কার্ফু, কনটেনমেন্ট জোন, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, মাস্ক, স্যানিটাইজারের মতো কত নতুন নতুন শব্দ সম্পর্কে ভারতের মানুষ পরিচিত হল। সবমিলিয়ে নাজেহাল মানুষ বলতে শুরু করে ২০২০ সালটা প্রকৃত অর্থেই বিশে-বিষ। ২০২০ সালের শেষের দিকে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমতে ধাপে ধাপে শুরু হল আনলক পর্ব। আর ২০২১ সালের শুরুতেই একজোড়া করোনার টিকাকে ভারত সরকার ছাড়পত্র দিল। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে করোনার টিকাকরণ। ইতিমধ্যেই তার দুটি পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে তৃতীয় পর্যায়ের টিকাকরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু ফের ভারতে শুরু হয়েছে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত। বেশ কয়েকমাস স্থিমিত থাকার পর ফের ৫০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে দৈনিক সংক্রমণ। ফলে চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের।  


বিগত এক বছর দেশের সাধারণ মানুষ অনেক কিছুরই সাক্ষী থেকেছে। লকডাউনে সব বন্ধ, বেশিরভাগ সরকারি বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা ঘরে বসেই কাজ করেছেন। আবার কোনও কোনও সংস্থা ঝাঁপ বন্ধ থাকায় কাজ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। ছোট ও মাঝারি কল কারখানা বন্ধ থাকায় কর্মচ্যুত হয়েছিলেন অসংখ্য শ্রমিক। আবার ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া রাজমিস্ত্রি, দিন মজুরেররা আকুল পাথারে পড়েছিলেন। গণ পরিবহন বন্ধ থাকায় অনেকেই পায়ে হেঁটেই নিজের রাজ্যে ফেরার পথ ধরেন। আর পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে কখনও ট্রেনে, কখনও বা পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অনেক শ্রমিকের। পরে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালিয়ে তাঁদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে কেন্দ্রীয় সরকার। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলিও ট্রেন বা বাসের ব্যবস্থা করে ভিন রাজ্যে আটকে পড়া বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনে।

 

একটা আনুবীক্ষনিক ভাইরাসের ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। গোটা বিশ্বেই ২.৭২ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এই এক বছরে। কিন্তু তবুও মানুষ কোনও শিক্ষা নেয়নি। এক বছরে জীবিকা, প্রাণ, সংসার সব কিছুই ধ্বংসের মুখে পড়লেও মানুষ এক ফোটা শিক্ষা নেয়নি। যার প্রমান দ্বিগুণ উদ্যোমে ফিরে এসেছে করোনা ভাইরাস। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঢুকে পড়েছে। আর ইউরোপের কোনও কোনও দেশে তৃতীয় ঢেউ। আজ থেকে এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সারা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ জনতা কার্ফু পালন করেছিলেন। ওই দিনই বিকেলে থালা-বাটি-বাসন, কাঁসর-ঘন্টা বাজিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। এরপর ২৫ মার্চ দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন। এক বছর পর ২২ মার্চের আগের ২৪ ঘন্টায় ৪৬ হাজার ৯৫১ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হলেন। ফলে ফের লকডাউনের রাস্তায় হাঁটতে হবে না তো সরকারকে? চিন্তিত চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্তারা। 


Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post