১৯৬৭ থেকে টানা ২০০৬ অবধি কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছে সিপিএম। ব্যতিক্রম ছিল ১৯৭২ সাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগমনে ২০১১ সালে পরিবর্তনের ঢেউয়ে তৃণমূলের মদন মিত্র জিতে আসেন এই কেন্দ্র থেকে। কিন্তু ফের ২০১৬ সালের বিধানসভায় মদনবাবু হেরে যান সিপিএম প্রার্থী মানস মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তবে এবার প্রার্থী বদল করেছে সিপিএম। তরুণ নেতা সায়নদীপ মিত্রকে কামারহাটিতে পাঠিয়েছে সংযুক্ত মোর্চা। অপরদিকে ফের তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন মদন গোপাল মিত্র। আর বিজেপি কামারহাটি থেকে দাঁড় করিয়েছে রাজ্য রাজনীতির পরিচিত মুখ তথা লড়াকু নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ফলে কার্যত প্রতিটি দলেই ষ্টার প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন কামারহাটিতে। তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কামারহাটিতে লড়াই এবার ত্রিমুখী। সবার নজর এই কেন্দ্রের দিকেও।
তৃণমূলের মদন মিত্র স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয় এবং রঙিন ব্যক্তিত্ত্ব। আবার সারদা মামলায় জেলও খেটেছেন। এমনকি ২০১৬ সালে তিনি জেলে থাকাকালীনই কামারহাটি থেকে ভোটে লড়েন এবং হারেন। মদন মিত্রের অনুগামীদের দাবি, তাতে দাদার প্রতি সহানুভূতি বেড়ে গিয়েছে। এমনিতেও কাজের মানুষ মদন, হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে তাঁর সাহায্য অপরিসীম | খুব রঙিন মেজাজের মানুষ, গান বাজনা, হৈ চৈ করতে ভালোবাসেন। এবার ফের একবার ভাগ্য ফেরাতে কামারহাটির জনতার আশীর্বাদ চাইছেন তিনি।
বিজেপির প্রার্থী অনিন্দ্য ওরফে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন দল করছেন। শোনা যায় তিনি আরএসএস ঘনিষ্ঠ। টেলিভিশনে বিভিন্ন বিতর্ক অনুষ্ঠানে দলের পক্ষ থেকে নিয়মিত হাজির থাকেন তিনি। ফলে রাজ্য রাজনীতিতে চেনা মুখ রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে নিয়ে দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও নেই, কাজেই তাঁকে জেতাতে ময়দানে হাজির সবাই। এবারে ভোট কাটাকাটির খেলায় কে সুবিধা পান সেটাই দেখার।
এবার কামারহাটিতে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র। এবার বেশ কয়েকজন তরুণ প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে সিপিএম। তাঁদের মধ্যে অন্যতম সায়নদীপ। সে বাম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর (DYFI) রাজ্য সম্পাদক। সম্প্রতি বামেদের নবান্ন অভিযানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ফলে লড়াকু নেতা হিসেবে দ্রুত উঠে আসা এই তরুণ তুর্কি যে যথেষ্ঠই বেগ দেবেন বাকি দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সেটা বলাই বাহুল্য। তাঁর ভোট প্রচারেও রয়েছে অভিনবত্ব। দোলের দিনও চুটিয়ে রঙ খেললেন স্থানীয় যুবক-যুবতীদের সঙ্গে। পাশাপাশি পৌঁছে যাচ্ছেন কামারহাটির অলিগলি।
এবার দেখা যাক বিগত নির্বাচনের নিরিখে কে কতটা এগিয়ে। ২০১১ সালে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মদন মিত্র। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে ফের জয়ী হন মানস মুখোপাধ্যায়। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্র পেয়েছিলেন ৫৭,৯৯৬ ভোট। সেই জায়গায় বাম প্রার্থী তথা সিপিএম নেতা মানস মুখোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৬২,১৯৪ ভোট। তিনি জিতেছিলেন মাত্র ৪,১৯৮ ভোটে। ওই কেন্দ্রে সেবার বিজেপি প্রার্থী কৃষানু মিত্র পেয়েছিলেন ১০,৭৯৭ ভোট। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা ভোটেই বিজেপি এই অঞ্চলে ভোট অনেকটাই বাড়িয়েছে। দমদম লোকসভা আসনের অন্তর্গত কামারহাটিতে বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য পেয়েছিলেন, ৪৫,৬৩১ ভোট।
সেখানে সিপিএম প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্য পেয়েছিলেন ২১,৭৭০ ভোট। আর তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় সেখানে ভোট বাড়িয়ে পেয়েছিলেন, ৬৩,৩৫৬ ভোট। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে এবার তৃণমূলের কাছে কামারহাটি সুবিধাজনক জায়গায় আছে। কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোটের আগে কামারহাটি এলাকায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে অনেকটাই। আর রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো লড়াকু নেতা ইতিমধ্যেই এলাকায় বেড়িয়ে পড়েছেন প্রচারে। পিছিয়ে নেই সায়নদীপও। আবার নিজের এলাকায় মদন মিত্র খুবই জনপ্রিয়। সবমিলিয়ে কামারহাটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখতে চলেছে বঙ্গবাসী।
Post a Comment
Thank You for your important feedback