প্রথম দফার নির্বাচনের আর বেশি দেরী নেই। এরমধ্যেই তৃতীয় ও চতুর্থ দফার নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা নিয়ে রাজ্যজুড়েই চুরান্ত ক্ষোভ-বিক্ষোভে জেরবার বিজেপি। এমনিতেই বঙ্গ ভোটের প্রথম চার দফার মোট ১২০ জন প্রার্থীর নামই ঘোষণা করেছে বিজেপি। আর তাতেই প্রকাশ্যে চলে আসছে জেলায় জেলায় অন্তর্দ্বন্দ্ব ও প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ। স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে বঙ্গ বিজেপি। পরিস্থিতি সামাল দিতেও নাজেহাল তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে অবস্থা সামাল দিতে আসরে নামলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এমনকি পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তিনি সোমবার রাতেই তড়িঘড়ি কলকাতায় ডেকে আনলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকেও।
কার্যত ভোররাত পর্যন্ত তাঁরা বৈঠক করেন বঙ্গ বিজেপির নেতাদের সঙ্গে। মূলত ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ছিলেন শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অমিত মালব্য, মুকুল রায়, অরবিন্দ মেনন, এবং অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমুখ। পাশাপাশি বৈঠকে অংশ নেন বি এল সন্তোষ, ভূপেন্দ্র যাদবের মতো কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর মঙ্গলবার সকালেও অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডা একান্ত বৈঠক করেন বলে সূত্রের খবর। এরপর এদিন সকাল ৯টা নাগাদ দিল্লি উড়ে যান অমিত শাহ। কিন্তু এখনও কলকাতায় রয়ে গিয়েছেন নাড্ডা।
সোমবার স্থির ছিল, দক্ষিণবঙ্গ সফর শেষ করে অমিত শাহ অসম ঘুরে চলে যাবেন দিল্লিতে। কিন্তু সমস্ত পরিকল্পনা বাদ দিয়ে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন নিউটাউন অঞ্চলের এক পাঁচতারা হোটেলে। তার আগেই দিল্লি থেকে জরুরী ভিত্তিতে ডেকে নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকেও। রাতেই শুরু হয়ে বৈঠক। প্রথমে ঠিক ছিল মধ্যরাতে অমিত ফিরে যাবেন দিল্লিতে, কিন্তু বৈঠক শেষ হতেই গড়িয়ে যায় ভোররাত। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, এদিন সকালেও দিল্লি যাওয়ার আগে একান্ত বৈঠক করেন অমিত ও নাড্ডা।
এখনও জল্পনা রয়েছে কি এমন জরুরি বিষয় ছিল যাতে রাতভর বৈঠক করতে হল কেন্দ্রীয় বিজেপির দুই হেভিওয়েট নেতাকে? জানা যাচ্ছে, অমিত শাহ এবারের সফরে এসে সংগঠনের অবস্থা দেখে চিন্তিত, বিশেষ করে সোমবার তাঁর দুটি সভায় জনসমাগম দেখে। দুটি সভাতেই জনসমাগম কম ছিল। এই বিষয়ে রাজ্য নেতাদের কাছে কৈফিয়তও চেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে বৈঠকে সর্বাধিক গুরুত্ব পায় বিজেপি-র নির্বাচনী কার্যালয় এবং বিভিন্ন জেলায় ক্ষোভ বিক্ষোভ। কেন এই পরিস্থিতি, সেটা নিয়ে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের কাছে জানতে চান অমিত শাহ।
সূত্রের খবর, বঙ্গ বিজেপি নেতারা সাফাই দিয়েছেন, বিজেপি এবার ক্ষমতায় আসবে ধরে নিয়েই লোকজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠেছেন। তাই তারা সকলেই টিকিটের প্রত্যাশী হয়ে পড়েছেন। আর সেই কারণেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। অপরদিকে ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায় অমিতের সভায় লোক কম হওয়া নিয়ে বিজেপি নেতাদের সাফাই এখন মাঠ থেকে আলু তোলার মরশুম, তাই লোক জোগাড় করতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁরা যুক্তি দেন, খড়গপুরে অমিতের রোড শো সন্ধ্যায় হওয়ায় প্রচুর লোক হয়েছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, রাজ্য বিজেপির এই যুক্তিতে খুশি নন অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডা। তাঁদের স্পষ্ট বার্তা নবান্নের দখল চাই-ই-চাই।
মঙ্গলবার সকাল ৯টার কিছু পর অমিত শাহ কলকাতা ছাড়েন। কিন্তু এখানে রয়ে গিয়েছেন জেপি নাড্ডা। রাজনৈতিক মহলের মতে, তাঁকে বিশেষ কিছু দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন অমিত শাহ। এমনকি এও শোনা যাচ্ছে, অমিত শাহ নিজেই বেশ কয়েকদিন কলকাতায় এসে থাকতে পারেন। এমনকি বেশ কয়েকটি আসনের প্রার্থীও বদল করা হতে পারে। আর পরবর্তী পর্যায়ের প্রার্থী তালিকা তৈরিতে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে চাইছেন কেন্দ্রীয় বিজেপির নেতারা।
Post a Comment
Thank You for your important feedback