‘তুমি একটু আমাদের হয়ে কাজ করে দাও না’ নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতাকে ফোন মমতার

একটি তিন মিনিটের অডিও ক্লিপ শনিবার প্রথম দফার নির্বাচনের দিন সব ফোকাস কেঁড়ে নিল। হাইভোল্টেজ ভোটের দিনও যা আলাদা করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। কি আছে ওই অডিও ক্লিপে। তাতে শোনা যাচ্ছে এক মহিলা নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা তথা তমলুকের বিজেপি সহ-সভাপতি প্রলয় পালের সঙ্গে কথা বলছেন। ওই মহিলার কন্ঠস্বর অবিকল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো। বিজেপি নেতা প্রলয় পালের দাবি, ওই কন্ঠস্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, তিনিই তাঁকে ফোন করে সাহায্য চেয়েছেন। যদিও এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি সিএন নিউজ। কী বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? অডিও ক্লিপে শোনা যাচ্ছে বিজেপি নেতাকে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘তুমি অনেক ইয়ং ছেলে। অনেক কাজ কর আমি জানি সব কিছু।তুমি একটু আমাদের হয়ে কাজ করে দাও না। সাহায্য করে দাও না। তুমি দেখবে কোনও অসুবিধে হবে না’। অর্থাৎ ভোটে জিততে বিজেপি নেতার সাহায্য প্রার্থনা করছেন সয়ং তৃণমূল নেত্রী। যদিও এই অডিও টেপের সত্যতা স্বীকার না করেও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সিএন নিউজকে ফোনে দাবি করেন, ভোটপ্রার্থী হিসেবে যে কেউ যাকে খুশি ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন। এতে কোনও অন্যায় নেই। 


ফোন করে নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পালের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর উত্তরে ওই শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা জবাবে কি বলেছেন? প্রায় তিন মিনিটের কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে ধরা হল। (যদিও এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করা হয়নি)


মমতা: তুমি অনেক ইয়ং ছেলে। অনেক কাজ কর, আমি জানি সব কিছু।
প্রলয়: হুম…
মমতা: তুমি একটু আমাদের হয়ে কাজ করে দাও না। সাহায্য করে দাও না। তুমি দেখবে কোনও অসুবিধে হবে না।
প্রলয়: কিন্তু দিদি আপনি শুনুন। আমি, আমার পরিবার তো আপনাকে দেখেই রাজনীতি করেছিলাম।
মমতা: আমি জানি সব…
প্রলয়: আপনার আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করেছিলাম। যে দিন আপনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন, যেদিন রেজাল্ট ঘোষণা হয়, পাঁচ দিন ব্রাহ্মণ ডেকে হোম যজ্ঞ করে মিটিং মিছিল করেছিলাম। কিন্তু খারাপ লাগে দিদি এত ত্যাগ করার পরও যখন প্রলয় পাল রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট পায় না, তখন আর বলার কিছু থাকতে পারে না।
মমতা: এটা কে করেছিল? তোমরা জানো তোমাদের লোকাল লিডার ছিল, সে আমাদের নন্দীগ্রামে যেতে দিত না, নন্দীগ্রামে ঢুকতে দিত না। তাদের একটা জমিদারি ছিল।
প্রলয়: তা বলে দিদি রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট পাব না?
মমতা: আরে আমি আছি কী করতে!
প্রলয়: আমি তো মার খেয়েছি। আমি তো আপনার মহাদেবের হাতে মার খেয়েছি।
মমতা: আমি সব জানি। আমি পরে শুনেছি। আমি তো আগে এত ডিটেইলসে খবর নিতাম না।


যদিও তৃণমূল নেত্রীর আকুতি শুনে বিজেপি নেতা প্রলয়বাবু পরিস্কার জানিয়ে দেন, ‘আমি বেরিয়ে এসেছি দল থেকে। যে দল থেকে বেরিয়ে এসেছি, এখন যে দলটাই করি না কেন, আমি তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না। আমি প্রাণ দিয়ে, জীবন দিয়ে যে দলটা করি, সেটাই করি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি এত বড় নেতৃত্ব হওয়া সত্ত্বেও আপনি আমার মতো সাধারণ কর্মীকে ফোন করেছেন, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু দিদি আপনাকে ক্ষমা করবেন’। সব শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তুমি একটু ভেবে দেখ, থ্যাঙ্ক ইউ।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীর ফোন পেয়েও আকুতভয় বিজেপি নেতা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন ‘আমি কোনও দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করি না। সে শিক্ষা আমার রক্তে নেই। দিদি যাই বলুন না কেন আমরা শুভেন্দু অধিকারীর জন্য লড়াই করছি, লড়াই করব। তাঁকে বিধায়ক হিসাবে জিতিয়ে আনবই’। অডিও ক্লিপটি ভাইরাল হতেই প্রলয় বাবু বলেন, এই ফোনটি তাঁর কাছে এসেছিল একটি অচেনা নম্বর (Unknown Number) থেকে। সেটি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন নম্বর সেটি তিনি জানতেন না। তবে কন্ঠস্বর অবিকল দিদির মতোই। যদিও গোটা ঘটনায় শোড়গোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post