‘সান্দাকফু’ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ | কাঞ্চনজঙ্ঘার ‘স্লিপিং বুদ্ধ’-কে চোখের সামনে সুস্পষ্ট দেখতে হলে যেতে হবে সান্দাকফুতে। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত নেপাল সীমান্তের কাছে অবস্থিত সান্দাকফু| প্রধানত ট্রেকিং করে যেতে হয় এখানে, তবে শিলিগুড়ি থেকে মানেভঞ্জন নাম এক পাহাড়ের কোলে একটি ছোট্ট গ্রামে পৌঁছাতে হবে আপনাকে। এখান থেকেই শুরু হয় ট্রেকিং। তো এবার শুরু করা যাক আমাদের যাত্রা –
ছবি: কাঞ্চনজঙ্ঘার ‘স্লিপিং বুদ্ধ’
কিভাবে যাবেন?
হাওড়া বা শিয়ালদহ অথবা কলকাতা স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন যাওয়ার যে কোনও এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে পৌঁছে যান নিউজলপাইগুঁড়ি | যে ট্রেনগুলি ধরতে পারেন তার বিবরণ নিচে দেওয়া হল –
শিয়ালদহ থেকে –
১৩১৪১ তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস
১২৩৭৭ পদাতিক এক্সপ্রেস
১২৩৪৩ দার্জিলিং মেল
১৩১৪৭ উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস
হাওড়া থেকে –
১২৩৪৫ সরাইঘাট এক্সপ্রেস
১২০৪১ শতাব্দী এক্সপ্রেস
কলকাতা থেকে –
১২৫১৭ কলকাতা গরিব রথ এক্সপ্রেস
১২৩৬৩ কলকাতা হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস
নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে দেখবেন অনেক গাড়ি আছে। একটু দরাদরি করে বুক করে নিতে পারেন অথবা আগে থেকে বুক করেও যেতে পারেন। কলকাতার সল্টলেক গোর্খা ভবন থেকে সান্দাকফুতে থাকার ট্রেকার্স হাট বুক করে নিতে পারেন (GTA tourist Hut booking- DD 28, Gorkha Bhawan, 2nd Cross Road, DD Block, Sector 1, Kolkata, West Bengal 700064) সেখান থেকেই আপনি ওখানকার গাইড এসোসিয়েশনের যাবতীয় নম্বর পেয়ে যাবেন, তাঁদের ফোন করেও গাড়ি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে বলে রাখতে পারেন। তাতে কিছুটা সময় ও বাঁচবে ও গাড়ি বুকিংয়ের ঝামেলা ও এড়ানো যাবে।
মানেভঞ্জন-
এবারে গাড়ি নিয়ে টয়ট্রেনের লাইনকে ডানে-বামে রেখে এগিয়ে যান মানেভঞ্জনের দিকে। একটা কথা বলে রাখা ভালো চেষ্টা করবেন ৮ থেকে ১০ জনের দল নিয়ে যাওয়ার। এতে যেমন খরচ কমবে তেমনই গাড়ি বা সান্দাকফুতে ঘরের থাকার সুবিধেও হবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই গাড়িতে ওঠার আগে নিউ জলপাইগুড়িতে কিছু পেট ভরার মতো খেয়ে নেবেন। রাস্তায় দোকান পড়বে, তবুও খালি পেটে পাহাড়ে ভ্রমণ না করাই ভালো। পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতেই পৌঁছে যান পাহাড়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট জনপদ মানেভঞ্জন। এখানেই আপনি পাবেন ব্রিটিশ আমলের বিখ্যাত ল্যান্ডরোভার গাড়ি। গাইড এসোসিয়েশন থেকে গাইড ও পারমিশন করিয়ে নিন। বুক করতে পারেন ঐতিহাসিক ল্যান্ডরোভার। তবে পায়ে হেঁটেও ট্রেক করে যেতে পারেন সান্দাকফু। সেক্ষেত্রে সময় লাগবে পাঁচদিন মতো। পথে বেশ কয়েকটি গ্রামে রাত্রিবাসের সুবিধে আছে। যারা ট্রেক করতে পারবেন না, তাঁদের জন্য রইল ব্রিটিশ ল্যান্ডরোভার জিপ। ২০২০ সালেও এসে এই পাহাড়ি এবড়োখেবড়ো বোল্ডারযুক্ত রাস্তায় যে গাড়িগুলি পর্যটকদের অন্যতম ভরসা। কাঞ্চনজঙ্ঘার ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ভিউ পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। তবে এই সময় প্রচন্ড ঠান্ডা থাকে। আবার রনডোনড্রেনের অপরূপ শোভা দেখতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের মধ্যে।
গাইড ও পারমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-
সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের এন্ট্রি ফি- ২০০ টাকা
সঙ্গে ক্যামেরা থাকলে অতিরিক্ত ১০০ টাকা
গাইডের খরচ ৮০০-১০০০ টাকা প্রতিদিন
সঙ্গে রাখতে হবে পরিচয় পত্র ও চারকপি পাসপোর্ট ছবি।
আমরা গাড়ি নিয়েই যাবো, অগত্যা চেপে বসলাম ঐতিহাসিক ল্যান্ডরোভার জিপে। জিপ সাফারি নামেও পরিচিত এই ট্রেকিং রুটটি। সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের (Singalila National Park) মধ্যে দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে পাহাড় বেয়ে চিত্রে পৌঁছায় আমাদের ল্যান্ডরোভার। এখানেই দুপুরের খাবারের বিরতি। তবে ভাত-ডাল নাও পেতে পারেন, পরিবর্তে মোমো, ম্যাগি বা নুডুলস জাতীয় খাবারই পাবেন। ফলে সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার রাখবেন। পরবর্তী গন্তব্য টংলু, এখানেই রাত্রিবাস। এর উচ্চতা ৩০৭০ মিটার। থাকার জন্য ট্রেকার্স হাট রয়েছে টংলুতে। তবে আপনারা চাইলে সরাসরি সান্দাকফু পৌঁছে যেতে পারেন। তবে সেটা না করাই ভালো। উচ্চতা ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে একরাত এখানে কাটিয়ে নেওয়া উচিত কাজ হবে। এখান থেকে যত উপরের দিকে উঠবেন, পথের ধারে দেখা মিলতে শুরু করবে পেঁজা তুলোর মত বরফ। টংলুতে রাতে ভালোই ঠান্ডা পড়ে। তাই দরকার পড়লে পুরো হাত, মুখ, নাক, কান ঢেকে রাখবেন। যদি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়, এখানেই বরফপাত দেখতে পাবেন। সাধারণত নভেম্বরের শেষে ও ডিসেম্বরে ভালো বরফ পরে টংলুতে। এখানকার টেকার্স হাটগুলি কাঠের তৈরি। প্রতি ঘরে ৫-৭টি বেড থাকে। প্রতি ঘরেই রয়েছে বাথরুম। গরম জল চাইলেই পাবেন। রাতের খাবারও এখানে পেয়ে যাবেন। ভাত, ডাল, সবজি ও ডিমের কারি পাওয়া যায় অনায়াসে। একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো, আপনাদের দলের গাইড আপনাদের সঙ্গেই থাকবে। তাঁর খাবার খরচ পর্যটকদের বহন করতে হবে, এটাই নিয়ম। যাই হোক শুভ রাত্রি। কাল যাব সান্দাকফু |
এরপর আগামী পর্বে….
إرسال تعليق
Thank You for your important feedback