করোনা কালেও নজির, ভাটপাড়ার যুবকের অঙ্গদান শহরের তিন হাসপাতালে


এই করোনা কালে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে বলে সোচ্চার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু এই করোনা আবহেই এক অনন্য নজির গড়তে চলেছে কলকাতা। এক ব্রেন ডেথ হওয়া রোগীর লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র, চোখ ও ত্বক প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হল। কলকাতার তিন হাসপাতালে এই প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ার বাসিন্দা বছর একত্রিশের যুবক সংগ্রাম ভট্টাচার্য। পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। রবিবার রাতেই তাঁর ব্রেন ডেথ ঘোষণা করে স্বাস্থ্যভবনের ‘ব্রেন ডেথ’ কমিটি। এরপরই সংগ্রামের পরিবার তাঁর অঙ্গ দানের সিদ্ধান্ত নেয়। তৎপরতার সঙ্গেই সংগ্রামের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয় রবিবার রাতেই। সেই সঙ্গে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গ্রহীতাদের খোঁজও শুরু করেন অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাতেই বিশেষ বিমানে কলকাতায় আনা হয় আগরতলার এক ব্যক্তিকে। তিনি লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন। ওই ব্যক্তির শরীরে সংগ্রামের লিভার প্রতিস্থাপিত করা হচ্ছে। হাওড়ার লিলুয়ার এক যুবকের শরীরে সংগ্রামের একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হবে। আপর একটি কিডনি এসএসকেএম হাসপাতালে গ্রিন করিডর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাতেই। সেখানেই এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে একটি কিডনি। সংগ্রামের হৃদযন্ত্র পাঠানো হয় আর এন টেগোর হাসপাতালে। সেখানেই এক হৃদযন্ত্র প্রায় বিকল হওয়া রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে সংগ্রামের হৃদযন্ত্র। ইতিমধ্যেই সংগ্রামের দুটি চোখ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর এসএসকেএম হাসপাতালের স্কিন ব্যাঙ্কে তাঁর ত্বক দান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে অঙ্গ গ্রহীতাদের প্রত্যেকেরই করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। একইভাবে সমস্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। রবিবার রাতভর এই কাজ চলেছে।

তাঁদের প্রত্যেকেই করোনা নেগেটিভ জেনে তবেই প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অ্যাপোলো হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও), চিকিৎসক জয় বসু বলেন, ‘এই করোনা আতঙ্কের পর্বে এটা একটা যুদ্ধের মতো। আমরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে এই কাজটা করছি। সংগ্রামের পরিবারকে ধন্যবাদ জানানোর কোনো ভাষা নেই। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি তাঁর পরিবারকে এই ধরনের অঙ্গ দানে সম্মতি দেওয়ার জন্য’। উল্লেখ্য, মৃতের একটি কিডনি ও লিভার এই হাসপাতালেই প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। তবে দুর্ঘটনায় মৃত ওই যুবকের পরিবারের অঙ্গদানের এই মহৎ সিদ্ধান্তকে সকলেই কুর্ণিশ জানাচ্ছেন। এই করোনা আবহেও বেশ কয়েকজন প্রাণ ফিরে পাবেন সংগ্রামের অঙ্গ নিয়ে।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

أحدث أقدم