![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgR8aO4C9zBIdtOCB0t86FSeq6fFAV02_IEdoNhesTdVZgjqWZTtVJFlMQO-UmBCmc6PoLnd3RF6r6SFHuXsXpAL0y_qL9RyiWVLAc8vLxfiPiz64_H0xCeBHIgVv013aUjETRTCD4dz00/s1600/puru.png)
বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বড় বড় পাথরের বোল্ডার। আর তারই মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে চারটি পাহাড়। সবুজের ক্যানভাসে ধুসর এই পাহাড়গুলি শীতের পুরুলিয়ার মুখ্য আকর্ষণ। হ্যাঁ আমি কথা বলছি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের জয়চন্ডী পাহাড়ের। স্থানীয় মানুষদের কাছে চারটি পাহাড়ের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। যেমন, যোগীঢাল, জয়চণ্ডী, ঘোরী ও সিজনী। প্রত্যেকেরই উচ্চতা ২০০ থেকে ২৬০ মিটারের মধ্যে। তবে অনেকেই ঘোরীকে সীতাপাহাড় ও সিজনীকে কালীপাহাড় বলেও ডাকেন। সবমিলিয়ে শীতের ছোট্ট একটা ট্যুরের জন্য আদর্শ জায়গা এই জয়চণ্ডী পাহাড়।
![Jyochandi Pahar CN](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/08/13162539/Screen-Shot-2020-08-13-at-4.25.08-PM-300x172.png)
অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম-
আজকের প্রজন্মের কাছে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ও ট্যুরিজম খুবই জনপ্রিয়। অনেকেই বাইকে স্টার্ট দিয়ে একটু কাছে-দূরে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন কাজের চাপ কাটানোর জন্য। আবার অনেকেই অ্যাডভেঞ্চারের আশায় ট্রেকিংয়ে যান প্রতি বছরই। এই দুই শ্রেণীর মানুষের জন্য পুরুলিয়ার জয়চণ্ডী পাহাড় আদর্শ। কারণ অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম ও স্পোর্টসের জন্য এখানে মজুদ রযেছে অনেক সুযোগ। ব্যাপারটা খুলেই বলি। রক ক্লাইম্বিং ও নেচার স্টাডি ক্যাম্পে যোগ দিয়ে একটু রোমাঞ্চ অনুভব করার ভরপুর ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। কলকাতা থেকে খুব বেশি দূরেও নয়।
![](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/08/13162451/Screen-Shot-2020-08-13-at-3.43.24-PM-300x203.png)
তাই বাইকাররা অনেকেই চলে আসেন এই পথে। পাথুরে পথে বাইক চালিয়ে পাহাড়ের যতটা কাছাকাছি যাওয়া যায় আর কি। আবার পাহাড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ নিতেও এই জয়চণ্ডী পাহাড়ে বসে অনেক ক্যাম্প। কেউ কেউ আসেন রক ক্লাইম্বিংয়ের রোমাঞ্চ উপভোগ করতে। আগে এই অঞ্চলে থাকার সেরকম সুযোগ সুবিধা ছিলনা। তবে বর্তমানে পুরুলিয়া জেলার জয়চণ্ডী পাহাড়কে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাজ্য সরকার। এর পরই জয়চণ্ডী পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে যুব আবাস ও পথসাথী। তাই জয়চণ্ডী পাহাড়ে পর্যটক ও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের আনাগোনা বেড়েছে।
![Jyochandi Pahar CN](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/08/13162729/Screen-Shot-2020-08-13-at-4.27.13-PM-300x185.png)
জয়চণ্ডী পাহাড়-
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহর থেকে মাত্র তিন কিমি দুরে এই জয়চণ্ডী পাহাড়। ১৯৭৮ সালে জগৎ বন্দিত চিত্র পরিচালক সত্যজিত রায় এখানেই তাঁর ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার শ্যুটিং করেছিলেন। তখন থেকেই এই পাহাড়ের সৌন্দর্যের টানে ছুটে এসেছেন বহু মানুষ। নস্টালজিক বাঙালি মনে আজও এই পাহাড়ে গেলে চোখের সামনে দেখতে পান গুপি-বাঘার সঙ্গে উদয়ন পণ্ডিতের দেখা হওয়ার দৃশ্য ফুটে ওঠে। অথবা গুপি-বাঘার সেই বিখ্যাত খাওয়ার দৃশ্য। যা আজও বাঙালির মনে গেঁথে গিয়েছে। অপার নির্জনতা ও সবুজের মাঝে মাথা তুলে দাঁড়ানো কয়েকটি ছোট পাহাড়। নীচেই রয়েছে এক শান্ত গ্রাম, নাম তার নন্দুয়ারা। দূর থেকে দেখে মনে হবে গন্ধমাদন পর্বত নিয়ে হনুমান যখন উড়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর হাত ফসকে হয়তো কয়েকটি বড় পাথর এই অঞ্চলে পড়ে গিয়েছিল। ধু ধু প্রান্তরের মাঝে কয়েকটি খাঁড়া ও ন্যাড়া পাহাড় যেন সেই অপার বিস্ময় হয়েই রয়ে গিয়েছে।
![Jyochandi Pahar CN](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/08/13162441/1200px-Joychandi_Pahar_14694282039-300x208.jpg)
প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এখানে ভিড় করেন উঠতি পর্বতারোহীরা। পাহাড়ে ওঠার নানান কলা কৌশল শেখেন তাঁরা। প্রতিবছরই রাজ্যের বহু পর্বতারোহণ সংস্থা এখানে ক্যাম্প করেন। চলে শৈলারোহণ ও প্রকৃতি বিক্ষণ শিবির। তবে সাধারণ পর্যটকদের কাছেও এই এলাকা অপার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকে। বিশেষ করে শীতের মরশুমে এই এলাকার সৌন্দর্য যেন অনেকটাই বেড়ে যায়। এবার আসি পাহাড়ের বর্ণনায়। আগেই বলেছি কয়েকটি বড় পাহারের সমস্টি হল জয়চণ্ডী পাহাড়। মূল চারটি পাহাড় হল যোগীঢাল, জয়চণ্ডী, ঘোরী ও সিজনী। যোগীঢাল একেবারেই ন্যাড়া, রুক্ষ ও গাছপালাহীন।
![Jyochandi Pahar CN](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/08/13162446/img_0789-300x225.jpg)
এই পাহাড়ের চুড়াটি দেখলে মনে হবে যেন কোনও মন্ত্রবলে বর্শার ফলা মাটিতে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। কথিত আছে, বহু যুগ আগে এই এলাকার শাসক পঞ্চকোট রাজারা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের এই যোগীঢালের উপর থেকে হাত-পা বেঁধে নীচে ফেলে দিতেন। বর্তমানে এই পাহাড়েই রক ক্লাইম্বারদের স্বর্গরাজ্য। ভূগোলবিদদের দাবি, পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত এক বিশাল গ্রানাইট পাথরের জেগে থাকা কিছু অংশই হল জয়চণ্ডী পাহাড়। তাই এর এই অদ্ভুত রূপ। জয়চণ্ডীর উপর থেকে নীচের গ্রামগুলি ও রঘুনাথপুর শহর দেখতে দারুণ লাগে। এই পাহাড়ের উপর রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটি ওয়াচ টাওয়ার। ১৮৩১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দূরে খবর পাঠানোর জন্য এই স্তম্ভ বানিয়েছিল। এখন এটিই ওয়াচ টাওয়ার।
![Jyochandi Pahar CN](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/08/13162603/Screen-Shot-2020-08-13-at-3.44.31-PM-300x190.png)
৪০০ বছরের পুরোনো চণ্ডীমন্দির-
পলাশ,শাল,মহুয়ার ঘেরা লালমাটির শহর পুরুলিয়া জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জয়চণ্ডী পাহাড়। প্রায় ৮০০ ফুট উঁচু জয়চন্ডী পাহাড়ের নামকরণ হয়েছে মা চন্ডির নামানুসারে। কথিত আছে, প্রায় ৪০০ বছরের এই মন্দির। কিন্তু মূল মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় নতুন করে এটি বানানো হয়েছে। তবুও স্থানীয় মানুষদের কাছে যথেষ্টই জাগ্রত। নিত্যপুজো হয় এখনও। এই পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে শ্রী শ্রী চণ্ডীর মন্দিরটি। একটি বজরংবলির মন্দিরও রয়েছে সেখানে। সেখানে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে সিঁড়ি। একটি রাস্তাও রয়েছে তবে সেটা বাঁধানো নয়। মন্দির দেখতে হলে আপনাকে প্রায় ৫২০ ধাপ সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হবে। সিঁড়ির শুরুতেই রয়েছে একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি তোরন।
![Jyochandi Pahar CN](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/08/13162430/Screen-Shot-2020-08-13-at-3.43.59-PM-300x209.png)
আর একবার সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলেই আপনার কষ্ট এক লহমায় নি:শেষ হয়ে যাবে। কারণ এখান থেকে শান্ত-সবুজ পুরুলিয়ার এক মনরম দৃশ্য আপনাকে স্বাগত জানাবে। দেখতে পাবেন, একদিকে রঘুনাথপুর শহরের জীবনযাত্রা, অন্যদিকে পুরুলিয়ার আদিবাসী পল্লীর নিজেস্বতা। একদিকে সাঁওতালডিহি আরেকদিকে পঞ্চকোট পাহাড়। কিছু দূরে দেখা যায় জয়চণ্ডী পাহাড় রেলস্টেশন। দূর থেকে আসা ট্রেন সরিসৃপের মতো এঁকেবেঁকে এগিয়ে আসতে দেখে মনে হতেই পারে যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা চিত্র। এখানেই রয়েছে জয়চণ্ডী মাতার পঞ্চরত্ন মন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে শ্বেতপাথরের নির্মিত অষ্টভুজা শ্বেতশুভ্রা সিংহবাহিনী মা জয়চণ্ডী মায়ের অপরূপ মুর্তি। একপাশে শিবলিঙ্গ ও অন্যপাশে শালগ্রাম শিলা। মন্দিরের বাইরেই রয়েছে মানত বৃক্ষ।
![Jyochandi Pahar CN](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/08/13163052/Screen-Shot-2020-08-13-at-4.30.24-PM-300x192.png)
কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন?
জয়চণ্ডী পাহাড় যাওয়ার জন্য ট্রেন ও বাস দুটি রুটই রয়েছে। হাওড়া থেকে পুরুলিয়া যাওয়ার যেকোনও ট্রেনে আদ্রা স্টেশনে নামতে হবে। আবার ট্রেনে আসানসোল গিয়ে সেখান থেকে আদ্রাগামী ট্রেন ধরে নামতে পারেন সরাসরি জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশনে। কলকাতা থেকে সরাসরি বাস আসে পুরুলিয়া। আবার গাড়িতেও চলে আসতে পারেন এখানে। সময় লাগে ঘন্টা পাঁচেক।
![Jyochandi Pahar CN](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/08/13162502/Screen-Shot-2020-08-13-at-3.43.43-PM-300x190.png)
থাকার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ইউথ হোস্টেল রয়েছে। ইন্টারনেটে ঘর বুক করা যায়। ভাড়া ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হোটেল ও রিসর্ট।
গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট-
https://www.wbtourismgov.in/destination/district/purulia
https://youthhostelbooking.wb.gov.in
إرسال تعليق
Thank You for your important feedback