আলিপুর ‘ঋতব্রতর’ দুয়ারে ?

প্রসুন গুপ্ত

আলিপুরদুয়ার লোকসভা কিছুদিন আগেও ছিল জলপাইগুড়ি জেলার অংশ। পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিপুরদুয়ারকে পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে ঘোষণা করেন। উত্তরবঙ্গের মানুষ বলেন, পশ্চিমবঙ্গের প্রবেশদ্বার হল আলিপুরদুয়ার। এই জেলার মানুষ যা ভাবেন তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যায় সমগ্র ডুয়ার্সে। এই আলিপুরদুয়ারের অধিবাসী কারা? সেই ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চলে রাজবংশী সহ ষাটটির বেশি জনজাতির বাস ছিল। দেশ ভাগের পর বিপুল সংখ্যায় শরণার্থী চলে আসেন এই অঞ্চলে। প্রবল দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করা এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ায় বাম দলগুলি। বিশেষ করে সিপিএম ও আরএসপি। তাই এই অঞ্চলের ভোটারদের সিংহভাগই বামপন্থীদের পাশে ছিল। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতা দখলের পরও বামপন্থীদের দখলেই ছিল এই অঞ্চলের ভোট। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসেরও এই এলাকার রাজনৈতিক জমি দখল করতে সময় লেগে যায়। ২০১৪ সালের লোকসভা ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরের বেশিরভাগ আসনই নিজেদের দখলে নিয়ে আসে তৃণমূল কংগ্রেস।
কিন্তু এরপরই শুরু হল গোষ্ঠী কোন্দল। ভাঙতে শুরু করে শাসকদলের সংগঠন। যদিও গোটা উত্তরবঙ্গেই একই হাল তৃণমূলের। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে শাসকদলের ফল হল শোচনীয়। তবে এবার বামফ্রন্ট নয়, তৃণমূলের হারানো জমি দখল নেয় পদ্ম শিবির। এই ধাক্কা সামলে ২০২১-এর বিধানসভায় ভালো ফল করতে হলে দরকার ছিল সংগঠনে রদবদল। পুরোনো নেতৃত্বকে সরিয়ে নবীন প্রজন্মের কাউকে উত্তরবঙ্গে দায়িত্ব দেওয়ার কথা অনুভব করেন তৃণমূল নেত্রী। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিচার করেই নেত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন সিপিএম থেকে বহিস্কৃত প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একসময় তিনি ছিলেন বামপন্থী সারা ভারত ছাত্র সংগঠনের (SFI) বড়মাপের নেতা। বর্তমানে তিনি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ছুটেছেন উত্তরবঙ্গে। মাসের ২৫ দিন ঋতব্রত কাটাচ্ছেন উত্তরবঙ্গে। যারমধ্যে বেশিরভাগ দিনই থাকছেন আলিপুরদুয়ারে। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন, উত্তরবঙ্গে ক্ষমতার সিংহভাগই এখন রাজ্য বিজেপির দখলে। তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার জন্যই পাঠানো হয়েছে ঋতব্রতকে। একসময় বামপন্থী আন্দোলনের লড়াকু নেতা ঋতব্রত পতাকা বদলে ঘাসফুলের তুরুপের তাস। এখন দেখার তিনি তৃণমূলের হারানো জমি কতটা ছিনিয়ে আনতে পারেন গেরুয়া শিবির থেকে। উত্তর মিলবে একুশের নির্বাচনেই।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

أحدث أقدم