প্রতিটি দুর্গামণ্ডপে গেলেই দেখা যায় গণেশ মূর্তির পাশে লাল পাড় সাদা শাড়ি দিয়ে ঘোমটা দেওয়া একটি কলাগাছ দাঁড় করানো আছে। একেই সকলে কলাবউ নামে চেনেন। সাধারণ মানুষের কাছে সে গণেশের বউ। পুরোহিত বা শাস্ত্রজ্ঞরা তাঁকে বলেন নবপত্রিকা। যা মোটেই কিন্তু গণেশের বউ নয়, উল্টে গণেশের জননী।
নবপত্রিকা কথার মধ্যেই রয়েছে এর আক্ষরিক অর্থ, অর্থাৎ নয়টি পাতা বা উদ্ভিদের সমাহার। যা মূলত দুর্গার নয়টি শক্তির প্রতীক। এগুলি হল - কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান। এগুলি জোগার করে একটি কলাগাছের সঙ্গে বাকি আটটি সমূল গাছকে একত্র করে একজোড়া বেল সহ অপরাজিতা লতা দিয়ে বাঁধতে হয়। এরপর তাঁকে লাল পাড় সাদা শাড়ি ও সিঁদুর পড়িয়ে ঘোমটা টানা বধূর আকার দেওয়া হয়। যাকে দুর্গাপুজোর সময় প্রতিমার ডান দিকে গণেশের পাশে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। শাস্ত্রমতে এই নয়টি উদ্ভিদ হল দেবী দুর্গার নয়টি রূপ। এই নয়টি রূপ হল, রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী। যাকে একত্রে নবপত্রিকা রূপে বলা হয় নবদুর্গা।
মহাসপ্তমীর দিন সকালেই পুরোহিত নিজ কাঁধে নবপত্রিকা নিয়ে যান গঙ্গা বা কোনও জলাশয়ে। তাঁর পিছনে থাকে ঢাকির দল। শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে স্নান করানো হয় নবপত্রিকাকে। শাস্ত্রবিধি মেনে স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে পরানো হয় নতুন বস্ত্র বা শাড়ি। এরপর ফের নিয়ে আসা হয় পুজোমণ্ডপে। আসলে মণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে পুজো শুরু হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পরই দর্পণে দেবী দুর্গাকে মহাস্নান করানো হয়।
উল্লেখ্য, নবপত্রিকা মন্দির বা মণ্ডপে নিয়ে আসার পূর্বে পত্রিকার সামনেই দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পুজা করা হয়। পত্রিকাস্থিত অন্য কোনও দেবীর পুজো করা হয় না। মার্কেণ্ডেয় পুরাণে অবশ্য নবপত্রিকার কোনও উল্লেখ নেই। কালিকা পুরাণে সপ্তমী তিথিতে নবপত্রিকা পুজোর নির্দেশ রয়েছে। কৃত্তিবাস ওঝা রচিত রামায়ণে রামচন্দ্র কর্তৃক নবপত্রিকা পুজোর উল্লেখ রয়েছে। গবেষকদের মতে, নবপত্রিকার পূজা প্রকৃতপক্ষে শস্যদেবীর পূজা।
إرسال تعليق
Thank You for your important feedback