বিশাখাপত্তনম-আরাকু-হায়দরাবাদ (প্রথম পর্ব)

যদি কখনও একসঙ্গে পাহাড়, সমুদ্র ও সবুজের সমাহার দেখতে ইচ্ছে করে তবে কোথায় যাবেন? এই প্রশ্নটি অনেক ভ্রমণপিপাসু মানুষের মনেই আসে। উত্তর একটাই, বিশাখাপত্তনম বা ভাইজ্যাক। এখানে বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশির গা ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে  পূর্বঘাট পর্বতমালা। সবুজের সমারোহ এই এলাকা অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র থেকে আলাদা করেছে বিশাখাপত্তনমকে। প্রকৃতি দেবী এখানে যেন নিজের রূপ-রস-গন্ধ পুরোটাই ঢেলে দিয়েছে এখানে। এছাড়া ভারতের প্রথম দশটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন শহরের মধ্যে অন্যতম এই শহর। আবার হাওড়া থেকে মাত্র একরাতের জার্নি করে পৌঁছে যাওয়া যায় বিশাখাপত্তনম। সবমিলিয়ে কয়েকটা দিন পাহাড়-সমুদ্র-জঙ্গলের একযোগে মজা নিতে চলে আসুন ভাইজ্যাক। 

বহু প্রাচীন এই শহরের ইতিহাস। খ্রিষ্ট পূর্ব যুগে রাজা বিশাল বার্মা রাজত্ব করতেন এই অঞ্চলে। তাঁর নাম অনুসারেই এই শহরের নাম বিশাখাপত্তনম। আবার অনেকের মতে দেব সেনাপতি কার্তিকের অস্ত্রের নামানুসারে এই নাম। যাইহোক, ব্রিটিশ শাসনে বিশাখাপত্তনমের নাম ছিল ওয়ালটেয়ার। বর্তমানে স্থানীয় দাবি মেনে শহরের নাম হয়েছে ভাইজ্যাক। বিশাখাপত্তনম শহরে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের বিচ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম রামকৃষ্ণ বিচ ও ঋষিকোন্ডা বিচ। এছাড়া যারা নির্জনতা চান, তাঁদের জন্য রয়েছে ইয়ারডা বিচ। বিশাখাপত্তনমের অন্যতম আকর্ষণ হল আরাকু ভ্যালি আর কিরণডুলু প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ভ্রমণ। সবমিলিয়ে ভাইজ্যাক ভ্রমণ পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষক।

ভাইজ্যকের সবচেয়ে বিখ্যাত বিচ হল রামকৃষ্ণ বিচ। এটি শহরের প্রাণকেন্দ্রের একেবারে কাছে হওয়ায় সবসময় পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করে। এই বিচের পাড় সুন্দর করে বাঁধানো। যদিও এই বিচ স্নানের উপযোগী নয়, কারণ এখানে ডুবো পাথর আছে। তাই এই বিচে স্নান করা দণ্ডনীয় অপরাধ, সেই সঙ্গে ধূমপান করাও। যদি কেউ এই দুই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েন তবে তাঁদের জেল ও জরিমানা দুইই হতে পারে। তবে এই সুন্দর বিচে ঘুরে বেড়াতে ও ছবি তুলতে ভালোই লাগবে। এছাড়া আশেপাশে কয়েকটি দ্রষ্টব্য জায়গাও রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হল আইএনএস কুরুসওয়া, যা একটি সাবমেরিন। বর্তমানে ভারতীয় নৌসেনা থেকে রিটায়ার্ড হওয়ার পর মিউজিয়ামে রূপান্তরিত হয়েছে। পর্যটকরা এই সাবমেরিন ঘুরে দেখতে পারেন। কিভাবে নৌসেনা জওয়ানরা সাবমেরিনে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেন সেটা দেখে নিতে পারেন আইএনএস কুরুসওয়াতে ঢুকে। সাবমেরিন মিউজিয়াম সোমবার সম্পূর্ণ বন্ধ, বাকি দিন মঙ্গল থেকে শনিবার দুপুর ২টো থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। রবিবার ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা ৩০ মিনিট এবং দুপুর ২টো থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। 

এছাড়া রামকৃষ্ণ বিচের আশেপাশে রয়েছে কালী মন্দির ও নবরত্ন মন্দির। এছাড়া রামকৃষ্ণ বিচের কাছেই রয়েছে এক মাছের মিউজিয়াম, যার নাম মৎসদর্শিনী। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ ও কচ্ছপ এখানে রয়েছে, যা দেখে সকলেই আনন্দ পাবেন। পূর্বঘাট পর্বতমালার খাঁজে অবস্থিত বিশাখাপত্তনমের অন্যতম সুন্দর বিচ ঋষিকোন্ডা বিচ। এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি সি-বিচ, যা ভারতের অন্যতম সুন্দর বিচ। বিচটি স্নানের উপযোগী, তাই এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি, বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ও কম নয়। এই বিচে বালির রঙ আশ্চর্য রকমের সোনালী, তাই মনভোলানো এর সৌন্দর্য। মন খুলে ঋষিকোন্ডা বিচে স্নান করুন। এখানে কয়েকটি বিচ রিসর্ট রয়েছে।

আগেই বলেছি যারা একটু নির্জনতা পছন্দ করেন তাঁদের জন্য রয়েছে ইয়ারডা বিচ। এটি বিশাখাপত্তনম থেকে ৩২ কিমি দূরে অবস্থিত। জেলেদের গ্রাম ঘেরা এই সি-বিচ নির্জন জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। পাহাড় ও সমুদ্র মিলেমিশে একাকার এখানে। ফলে অপরূপ এক স্থান এই ইয়ারডা বিচ। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এই বিচ পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। সবচাইতে বড় কথা হল অলস সময় কাটানোর জন্য খুব ভালো এই ইয়ারডা বিচ। এই বিচের কাছেই রয়েছে একটি সুন্দর পার্ক। আছে কয়েকটি অসাধারণ রেস্তোরাঁ। প্রবেশ মূল্য গুনেই এই বিচে প্রবেশ করতে হয়, রাত্রিবাসের ব্যবস্থাও নেই এখানে। কারণ নৌ-বাহিনীর আওতায় পরে এই এলাকা। কিন্তু নারকেল গাছে ঘেরা এই অসাধারণ বিচ, যারা যাবেন, তাদের মনের মণিকোঠায় আজীবন গেঁথে থাকবে এই ইয়ারডা বিচ।

এরপর আগামী পর্বে….


Post a Comment

Thank You for your important feedback

أحدث أقدم