বছরের শিরোনামে করোনাই


এবছরটা করোনাভাইরাসের। বলতে গেলে গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত সবার ঘুম কেড়েছে এই অদৃশ্য ভাইরাস। করবে যে মুক্তি, সেই আশায় দিন গুনছে গোটা দুনিয়া। গত ১২ মাসে ৮ কোটিরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন প্রায় ২০ লাখ। 

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার চিনের অফিসে পৌঁছয় তখনও পর্যন্ত অজানা ভাইরাসের রিপোর্ট। চিনের উহানের মাছবাজার থেকে প্রথম মাথা চাড়া দেয় ভাইরাসটি। ৭ জানুয়ারি চিনা কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ভাইরাস সার্স-কোভিড ১৯। তাতে কোথাও বলা ছিল না এই ভাইরাস কীভাবে গোটা দুনিয়াকে গ্রাস করতে পারে। ১১ জানুয়ারি করোনার প্রথম বলি হন ৬৭ বছরের এক উহান বাসিন্দা। ২৩ জানুয়ারি উহানকে পুরো বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। চিনের যে ডাক্তার প্রথম এই ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করেছিলেন, সেই লি ওয়েনলিয়াং মারা যান।


ফেব্রুয়ারি থেকে তড়িঘড়ি উহানে বাসরত ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। সেসময় বেশিরভাগ আক্রান্তই ছিলেন কোনও না কোনও জাহাজের লোকজন। ধীরে ধীরে সর্বত্র চালু হয়ে যায় লকডাউন, মাস্ক, স্যানিটাইজার, শারীরিক দূরত্বের বিধি। শুরু হয় বাড়ি থেকে অফিস করার নতুন ব্যবস্থা। 

ইউরোপের প্রথম করোনার বলি ফ্রান্সে। দাবাগ্নির মতো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ইতালিতে। এরই পাশাপাশি ইরান, ব্রাজিলেও সংক্রমণের খবর আসে। প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় আমেরিকায়। সেখৈানে জারি হয় জাতীয় জরুরি অবস্থা। অবশেষে ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা হু করোনাকে আতিমারি হিসেবে ঘোষণা করে।

মার্চের মধ্যেই সংক্রমণে চিন, ইতালিকে ছাপিয়ে যায় আমেরিকা। রাশিয়াতেও আক্রান্ত বেড়ে চলে। মে নাগাদ দৈনিক সংক্রমণ বিশ্বে দাঁড়ায় ১ লাখেরও বেশি। ভারতে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৩০ জানুয়ারি কেরলের এক যুবকের দেহে। প্রথম মৃত্যু হয় কর্নাটকের কালবুর্গিতে সৌদি ফেরত এক ৭৬ বছরে বৃদ্ধের। 


দেশে প্রথমে জনতা কার্ফু হয় ২২ মার্চ। তারপর ২৫ থেকে দফায় দফায়. লকডাউন চলে ভারতে। বন্ধ হয়ে যায় সবকিছু। চরম দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকরা। কয়েকশো কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরতে হয় তাঁদের। পরে সরকারের তরফে বাস-ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। 


সেপ্টেম্বর থেকে ক্রমে বিধিনিষেধ ঢিলে করা শুরু হয় ভারতে। মোটামুটি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করে দেশ। কমতে শুরু করেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ভয় কেটেছে অনেকটাই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তরুণগগৈ, মতিলাল ভোরা, আমেদ প্যাটেল। এমনকী ট্রাম্পকেও ছাড়েনি করোনা। তিনি ছাড়াও সুস্থ হয়েছে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনোরো, ব্রটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরঁ, অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস, টেনিস তারকা জোকোভিক, গায়িকা ম্যাডোনা, প্রিন্স চার্লস আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়।


করোনা একেবারে ভেঙেচুরে ধস নামিয়ে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। স্মরণকালের সবথেকে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে দুনিয়ার বাজার। ভারতে অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে মাইনাস ২৩ শতাংশে। কাজ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ কর্মী। শেষবেলায় আশা যোগাচ্ছে করোনার টিকাকরণ, আশঙ্কা করোনার নতুন পরিবর্তিত ভাইরাস। 


Post a Comment

Thank You for your important feedback

أحدث أقدم