করোনা খুলেছে ব্যবসার নতুন নতুন দিগন্ত

২০২০ সালটা গোটা বিশ্বের মানুষই আজীবন মনে রাখবেন। করোনা ভাইরাস কার্যত গোটা বিশ্বকেই ওলটপালট করে দিয়েছে। এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপে প্রায় এক কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তেমনই বদলে গিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। কাজ হারিয়েছেন অগুনতি মানুষ, আবার নতুন নতুন কাজের জগৎ খুলে দিয়েছে এই করোনা ভাইরাস। চলতি বছরের মে মাসেই ‘হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ’ পূর্বাভাস দিয়েছিল, মারণ ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে পেশার জগতে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে, হলও তাই। 

বন্ধ হল বহু শিল্প, কারখানা, বেকার হলেন কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু পেট বড় বালাই, তাই করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে নতুন নতুন ব্যবসার পথ খুঁজে নিলেন মানুষজন। সবচেয়ে বড় উদাহরণ মাস্ক, গ্লাভস তৈরি বা স্যানিটাইজার তৈরি। মাস্ক-স্যানিটাইজার এখন জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। পাশাপাশি হ্যান্ড গ্লাভসের চাহিদাও বেড়েছে বিপুলভাবে। আর তার জোগান দিতে গড়ে উঠল নতুন নতুন ক্ষুদ্রশিল্প। পাড়ার মোড়ের দর্জি, লকডাউনে যাদের দোকান বা গুমটির ঝাঁপ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তাঁরাই ঘরে মাস্ক বানাতে শুরু করল। বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের মাস্ক ছেয়ে গেল বাজার।


এছাড়া বিভিন্ন ছোট ছোট কারখানা, যেখানে টি-শার্ট, শার্ট, প্যান্ট বা বারমুডা তৈরি হত, সেখানেও মাস্ক, পিপিই তৈরি করা শুরু হল। করোনা অতিমারীর জেরে মাস্ক, গ্লাভস এবং স্যানিটাইজারের চাহিদা বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। এছাড়া প্রোটেকটিভ ফেস শিল্ড, পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই), মেডিকেল প্রোটেকটিভ গগলস, মেডিক্যাল প্রোটেকটিভ শু কভার এগুলোর চাহিদাও বেড়েছে হু হু করে। তাই বহু কাপড়ের কারখানা রাতারাতি বদলে ফেলে নিজেদের ব্যবসা। 

বর্তমানে মাস্কও আবার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে জামা-কাপড়ের সঙ্গে মানানসই মাস্কের চাহিদা বিপুল। এবার আসা যাক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, গত বছরও পালস অক্সিমিটারের নাম কেউ জানতেন না, আবার স্যানিটাইজার গেট ব্যাপারটাই ছিল ধারণার বাইরে। কিন্তু করোনার জেরে এই জিনিসগুলোর চাহিদা বেড়ে গেল হু হু করে। ফলে খুলে গেল ব্যবসার নতুন দিগন্ত। গাড়ি, বাড়ি বা অফিস জীবানুমুক্ত করার জন্য অফিস খুলে ফেলেছে বহু সংস্থা, করোনা কালে তাঁদের ব্যবসারও শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে ভালোই।

 এছাড়া, অনলাইন বিপনন সংস্থা বা ডেলিভারি সংস্থার কাজও বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে এই ক্ষেত্রগুলিতে নিয়োগ হয়েছে অনেক মানুষের। আর একটা ব্যাপার, কালের নিয়মে প্রায় হারিয়ে যাওয়া সাইকেলের বিক্রিও বেড়ে গিয়েছে এই করোনা কালে। গণপরিবহণ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এবং আনলক পর্বেও অনেকে বাসে-ট্রেনে চড়তে না চাওয়ায় সাইকেল বিক্রি বেড়েছে। ফলে সাইকেল কারখানা এবং সাইকেল সারাই করার কাজও করেও বহু মানুষ রুটি রোজগার জোগার করে নিচ্ছেন। ফলে করোনা যেমন কেড়েছে বহু দিক, তেমনই ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। 


Post a Comment

Thank You for your important feedback

أحدث أقدم