দুই প্রাক্তন আইপিএস ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি, আবার দুজনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য, যদিও একজন বর্তমানে অন্যজন ছিলেন। এবার পশ্চিম মেদিনীপুরের জেবরা বিধানসভা আসনে মুখোমুখি লড়াইয়ে হুমায়ুন কবীর এবং ভারতী ঘোষ। প্রথমজন অবসরের কয়েকমাস আগেই ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন। এবং ডেবরা থেকে টিকিট পেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। তিনি ইস্তফা দেওয়ার আগে পর্যন্ত ছিলেন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার। যদিও বরাবর তাঁর বিরুদ্ধে শাসকদলের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। তাই ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগদান এবং ভোটের টিকিট পাওয়া সেই অভিযোগের সত্যতা প্রমান করে বলেই এখন সরব বিরোধীরা।
অপরদিকে দ্বিতীয়জন ভারতী ঘোষ, তিনিও তৃণমূল জমানাতেই একসময় পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন। পড়ে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপারও নিযুক্ত হন। সেই সময় তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে সম্বোধন করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। সেই সময় তিনিও ছিলেন তৃণমূল নেত্রীর স্নেহধন্য। যদিও ক্রমে তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় শাসকদলের। পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌঁছায় যে তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য উঠে পড়ে লাগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং সিআইডি। ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন ভারতী। ঘাটালে লোকসভা ভোটে প্রার্থীও হয়েছিলেন। কিন্তু অভিনেতা দেবের কাছে হেরে যান। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সেলিমা খাতুন (বিবি)। কিন্তু এবার তাঁকে এবার টিকিট দেয়নি শাসকদল। বদলে সদ্য ইস্তফা দেওয়া আইপিএস হুমায়ুন কবীরকে টিকিট দিয়েছে।
এবার এই দুই প্রাক্তন আইপিএসের ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ায় ডেবরা বিধানসভা কেন্দ্রটি গোটা পশ্চিমবঙ্গের নজর থাকবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, ভারতী ঘোষের নিজের হাতের তালুর মতো চেনা পশ্চিম মেদিনীপুর। ডেবরা তাঁর নিজের বাড়ির মতোই। প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম আসার পর থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন প্রচারে। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যায় তিনি ডেবরার আনাচে কানাচে ঘুরছেন, রোড শো করছেন আবার ছোট ছোট গ্রাম সভাও করছেন। পিছিয়ে নেই হুমায়ুন কবীরও। তিনিও এখানে সভা, রোড শো করছেন। প্রাক্তন এই আইপিএসের দাবি, তিনিই জিতবেন। অপরদিকে আরেক প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ বলছেন, সাধারণ মানুষ তাঁকে যেভাবে নিজের করে নিয়েছেন তাতে তাঁর জেতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ভারতী দেবীর কথায়, আমি এখানকার মানুষের সঙ্গে বহু বছর ধরে রয়েছি। আর হুমায়ুন বাবু বহিরাগত। এখানে ভোট আগামী ১ এপ্রিল। তবে ভোটযুদ্ধে কে বাজিমাৎ করেন সেটা জানতে আপেক্ষা করতে হবে আগামী ২ মে পর্যন্ত।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ডেবরা বিধানসভা কেন্দ্র। এখানে গত ২০১৯ লোকসভায় বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে হেরেছিলেন ভারতী ঘোষ। কিন্তু সেবার ডেবরা থেকে তিনি লিড নিয়েছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী অভিনেতা দেবের থেকে। এবার এই ডেবরা থেকে বিধানসভা আসনেই বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। ফলে সেই ধারা বজায় থাকলে ভারতী দেবীর জয় সহজ। কিন্তু একদা বাম গড় পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় তৃণমূলের রমরমা অনেকটাই বেড়েছে।
লোকসভা ভোটের নিরীখে ডেবরায় তৃণমূল প্রার্থী দেব পেয়েছিলেন ৮০,৫৯৯ ভোট, সেখানে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ পেয়েছিলেন ৮৪,৬১৮ ভোট। অর্থাৎ ডেবরায় প্রায় চার হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে বিজেপি। কিন্তু ২০১৬ বিধানসভা ভোটে এই ডেবরাতেই বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৮.১৫ শতাংশ ভোট। সেবার বিজেপি প্রার্থী সুকুমার ভুঁইয়া পেয়েছিলেন মাত্র ১৫,৪২৮ ভোট। সেই জায়গায় তৃণমূল প্রার্থী সেলিমা খাতুন বিবি পেয়েছিলেন ৯০,৭৭৩ ভোট। আর সিপিএম প্রার্থী জাহাঙ্গির করিম শেখ পেয়েছিলেন ৭৮,৮৬৫ ভোট। এবারে সিপিএম প্রার্থী প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল। ডেবরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট অনেকটাই। ফলে লড়াই এবার হাড্ডাহাড্ডি।
ছবিঃ ফেসবুক ...
إرسال تعليق
Thank You for your important feedback