তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিন দলনেত্রী ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে তাঁর প্রার্থীপদ ঘোষণা করার পাশাপাশি বলে রেখেছিলেন তিনি প্রয়োজন হলে দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জেও দাঁড়াতে পারেন। তবে টালিগঞ্জে তৃণমূলের প্রার্থী তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ট মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এবার সেই টালিগঞ্জেই বিজেপি প্রার্থী করল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে। যিনি আবার বলিউডের জনপ্রিয় গায়কও। এটা বিজেপির দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকায় বড় চমক হিসেবেই দেখছেন বাংলার রাজনৈতিক মহল। রবিবার তৃতীয় এবং চতুর্থ দফার ৭৫ আসনের মধ্যে ৬৫ আসনের দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল বিজেপি। বহু হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীকে যেমন টিকিট দেওয়া হয়েছে, তেমনই টলি পাড়ার জনপ্রিয় মুখদেরও প্রার্থী করে শাসকদলকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করল পদ্ম শিবির। কিন্তু টালিগঞ্জে বাবুলের টিকিট পাওয়া নিঃসন্দেহে বড় চমক। অরূপ বিশ্বাস এলাকায় পরিচিত মুখ। তিনি দীর্ঘদিনের টালিগঞ্জের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী।
সেদিক থেকে বাবুল নবাগত, যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বলছেন ‘বহিরাগত’। ফলে লড়াই কতটা জমবে সেটা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করছেন স্থানীয় তৃমমূল কর্মীরা। কিন্তু অন্য অঙ্কেই এই কেন্দ্রে বাবুল সুপ্রিয়কে প্রার্থী করল বিজেপি। তিনি এমনিতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তার ওপর নিজে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। তাই টলি পাড়ায় তাঁর প্রভাব রয়েছে। অপরদিকে, টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় বিজেপির প্রভাবও ইদানিং অনেকটাই বেড়েছে। অনেকেই যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। স্টুডিও পাড়ায় নীচুতলার কর্মী, কলাকুশলীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। এই পরিস্থিতিতে বাবুলের মতো লড়াকু এবং হেভিওয়েট নেতাকে দাঁড় করিয়ে বিজেপি তৃণমূলের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিল।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে টালিগঞ্জে অরূপ বিশ্বাস জিতেছিলেন প্রায় ১০ হাজার ভোটে। তিনি সিপিএম প্রার্থী মধুজা সেন রায়কে হারিয়ে ছিলেন। সেসময় বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন মাত্র ৭.৬৬ শতাংশ ভোট। অপরদিকে তৃণমূল প্রার্থীর ভোট ছিল ৪৬.৭৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভায় বিজেপির ভোট কিছুটা বাড়ে এই কেন্দ্রে। বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা পেয়েছিলেন ৪৫,৮১৪ ভোট, সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পেয়েছিলেন ৫৮,৮১৬ ভোট আর জয়ী তৃণমূলের মিমি চক্রবর্তী পেয়েছিলেন ৭৭,৭৮১ ভোট। ফলে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের শক্তি অনেকটাই বেশি। সেই দিক থেকে লড়াই ফিরিয়ে দিতে বাবুলকেই বেছে নিল বিজেপি।
কিন্তু এবার ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হতে পারেন সিপিএম প্রার্থী দেবদূত ঘোষ। তিনিও টলি পাড়ায় পরিচিত মুখ। এবং বাম ঘরানার অন্যতম শিল্পী। তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি গণ সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত দীর্ঘদিন। টালিগঞ্জের ক্ষোভ, অভাব, অভিযোগ সম্পর্কে তিনি যথেষ্ঠ ওয়াকিবহাল। ফলে প্রচারে এই ইস্যুই হাতিয়ার করে তিনি ইতিমধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ফলে টালিগঞ্জে এবার ত্রিমুখী লড়াই। ভোট বাজারে আক্ষরিক অর্থেই টালিগঞ্জ এবার তারকা কেন্দ্র।
إرسال تعليق
Thank You for your important feedback